নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ পদ্মা নদীর খেয়াঘাট ইজারা প্রথা বাতিলের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। রোববার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচিতে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর আলাতুলি ইউনিয়নের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে তাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন।
চরবাসীরা জানান, ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা এই ইউনিয়ন দুটির মানুষদের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। কিন্তু খেয়াঘাট ইজারাদাররা বছরের পর বছর ধরে তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে আসছেন। সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায়, মালামাল পরিবহনে বাড়তি টাকা নেওয়া এবং মাঝেমধ্যে হুমকি-ধামকির অভিযোগও তুলে ধরেন তারা। ফলে চরবাসী স্পষ্ট দাবি জানায়— খেয়াঘাটে কোনো ইজারা প্রথা থাকবে না, শুধু মাঝিরা পরিচালনা করবেন নৌকা।
সম্প্রতি চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দারা ফুলতলা ভাটোপাড়া, বিদিরপুর ও প্রেমতলী খেয়াঘাটের ইজারা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রোববারের কর্মসূচিতে চর আলাতুলির মানুষও যোগ দেন, যারা ভগবন্তপুর ও আলাতুলি ঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি তোলেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করেন— ‘চাঁদাবাজি চলবে না’, ‘ঘাটের নামে জুলুম বন্ধ করো’, ‘চরবাসী মুক্তি চাই’, ‘ইজারা প্রথা বাতিল করো’ ইত্যাদি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহীল কাফি, মোশারফ হোসেন ইমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেনসহ আরও অনেকে। তারা বলেন, ঘাটের নামে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম চলছে। চরাঞ্চলের নিরীহ কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থা আর মেনে নেওয়া হবে না।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা জানান, ইজারাদারদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে বারবার নিষেধ করা হলেও তারা তা মানছেন না। উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
সমাবেশ শেষে চরবাসীরা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্মারকলিপি গ্রহণ করে জানান, বিষয়টি নিয়ে দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে জেলা পরিষদ এক মাসের জন্য খেয়াঘাট ইজারা দিয়েছে, যা ১১ মে শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে ইজারাদাররা কোনো ধরনের হয়রানি বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবেন না। এরপর ঘাট ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম অরণ্য কুসুম, রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।