গরম এলেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। চারদিকে ভয়াবহ গরমে যখন গলা শুকিয়ে কাঠ, ঠিক এসময় রাস্তায় ঠান্ডা পানীয় চোখে পড়লেই তা দিয়ে গলা ভেজাতে মন পাগল হয়ে যায়।
কোনোকিছু চিন্তা না করে খাওয়া এ রাস্তার খোলা খাবার বা পানীয় থেকেই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি শিশু ডায়রিয়া রোগে মারা যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো ডায়রিয়া।
ডায়রিয়া কী
ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যকোনো পরজীবী সংক্রমণের ফলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। দিনে তিন বার বা তার চেয়ে বেশিবার ঘনঘন পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে ধরে নিতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া তীব্র হলে চাল ধোয়া পানির মতো পায়খানা নির্গত হয়।
কেন হয়
আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস, কখনো কখনো ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া। দূষিত পানি থেকেই এ রোগ ছড়ায়। শহরে ট্যাপের পানি অনেক সময় সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে এলে দূষিত হয় এবং ডায়রিয়া রোগের কারণ হিসাবে ভূমিকা পালন করে।
যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং পচা, বাসি খাবার খাওয়া ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। রাস্তার পাশে যেসব খোলা খাবার বিক্রি হয় গরমের কারণে সেগুলোও বেশিক্ষণ খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
এসব খাবার ডায়রিয়া রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়াও পানিশূন্যতাসহ নানা রোগের উপসর্গ হিসাবে গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়া হলেই কি ওষুধ খেতে হয়
ডায়রিয়া বা কয়েকবার পাতলা পায়খানা হলেই আমরা অনেকে মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ খেয়ে ফেলি। ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার সেই ওষুধ খাওয়া ইচ্ছেমতো বন্ধ করে দিই।
মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ
প্রকৃতপক্ষে এগুলো ডায়রিয়া থামানোরও ওষুধ নয়। এগুলো অ্যান্টিবায়োটিক। কোনো কারণে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে তা পূর্ণ মেয়াদে সঠিকভাবে শেষ করতে হবে। যখন-তখন বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। সাধারণত শুরু করলে একটি করে ট্যাবলেট প্রতিদিন আট ঘণ্টা পরপর সেবন করতে হবে।
কী করবেন
ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় এবং শরীরে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। এ দুটোকে রোধ করাই ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে।
১. জন্ম থেকে দুই বছর : ১০-২০ চা চামচ (৫০-১০০ মি.লি.)
২. দুই বছর থেকে দশ বছর : ২০-৪০ চা চামচ (১০০-২০০ মি.লি.)
৩. খাবার স্যালাইন ছাড়াও ঘরে তৈরি তরল খাবার যেমন ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে। বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধও খাবে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এতে ডায়রিয়া তুলনামূলক কম সময়ে সেরে যাবে।
৫. কিন্তু যদি পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা বা কামড়ানো, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৬. ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, নিয়মিত নখ কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন আর নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়ার প্রতিরোধ করা সম্ভব।