আন্না আর ইউলিয়া আকসেশেঙ্কোকে এমন বেশে কেউ কোনো দিন দেখেনি। কারণ বয়স মাত্র ১৪ বছর হলেও গত শনিবার দুই বোনকেই দেখা যায় নববধূর বেশে। শ্বেত-শুভ্র বিয়ের পোশাকটি তাঁদের পায়ের পাতা ছুঁয়ে ছিল। চুলের ফাঁকে গোঁজা ছিল ফুল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।
তবে নববধূর বেশে হলেও আন্না আর ইউলিয়ার বাড়িতে আনন্দের লেশমাত্র ছিল না। কারণ তারা দুজনই শুয়েছিলেন কফিনে। তিন দিন আগেই একটি রুশ মিসাইলের আঘাতে দুজনই প্রাণ হারিয়েছেন একসঙ্গে। শেষ বিদায় জানাতে এসে কফিন দুটির পাশে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না তাঁদের মা। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তাঁকে ধরে রেখেছিলেন স্বজনেরা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ক্রামাটর্কস শহরে আন্না আর ইউলিয়ার শোকস্তব্ধ বাড়িটিতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পরিবারের কেউই কথা বলতে পারছিলেন না। আত্মীয়-স্বজন আর প্রতিবেশী মিলিয়ে গোটা চল্লিশেক মানুষ অবস্থান করছিলেন বাড়িটিতে। সবার চোখেই ছিল অশ্রু।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে কয়েক শ মিটার দূরেই ক্রামাটর্কস শহরের একটি পিৎজা রেস্তোরাঁয় ছিলেন যমজ বোন আন্না আর ইউলিয়া। এ সময়ই রেস্তোরাঁটিতে এসে আঘাত করে একটি রুশ মিসাইল। এ ঘটনায় তাঁরা দুজনসহ অন্তত ১২ জন প্রাণ হারান।
মেয়েদের কফিনের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁদের মামেয়েদের কফিনের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁদের মা। ছবি: সংগৃহীত
আন্না আর ইউলিয়ার শোকসভায় অংশ নেওয়া তাঁদের শিক্ষক ভিক্টোরিয়া কোসকা জানান, বিয়ের অনুপযুক্ত কোনো কিশোরী মারা গেলে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ধরে নেওয়া হয়-তাঁর বিয়ে হবে স্বর্গে, কোনো ফেরেশতার সঙ্গে। যমজ দুই বোনকে তাই নববধূর বেশে সাজানো হয়।
ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘এটা হলো ঐতিহ্য। বিয়ের আগেই কোনো মেয়ে মারা গেলে সে হয়ে যায় ফেরেশতা। তাঁর স্থান হয় স্বর্গে। সেখানেই তাঁরা তাদের সঙ্গী বেছে নেন।’
যে রেস্তোরাঁয় মিসাইলটি আঘাত করেছিল, তার অনতিদূরেই ছিল আন্না আর ইউলিয়ার স্কুল। ভিক্টোরিয়া জানান, মিসাইলের বিস্ফোরণে স্কুলটিরও কিছু জানালার কাচ ভেঙে গেছে।
আন্না আর ইউলিয়ার কথা স্মরণ করে তাঁদের শিক্ষক বলেন, ‘প্রথম গ্রেডে আমি তাঁদের শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছিলাম। তাঁরা ছিল ছোট্ট দুটি আলোর বিন্দুর মতো। তাঁদের ছিল ঢেউখেলানো সুন্দর চুল। বড় সাদা রিবনে এগুলো বাঁধা থাকত। তাঁদের সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে আলো ছড়াতো তাদের নীল চোখের মণি। তাঁরা সব সময় একসঙ্গেই থাকত। একে অপরকে সমর্থন করত।