রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় হায়েনা দেখতে এসেছিলেন দুই বন্ধু—আশরাফুল ইসলাম ও হৃদয় আহমেদ। জানালেন, হায়েনার কামড়ে শিশু সাইফের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার খবর ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখেছিলেন। সেই থেকে হায়েনাটি দেখার ইচ্ছা ছিল তাঁদের।
ঈদের ছুটিতে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে চিড়িয়াখানায় আসেন দুই বন্ধু। হায়েনার খাঁচার সামনে দুপুরে আশরাফুলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আমরা চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছি। কিন্তু আমাদের মূল উদ্দেশ্য হায়েনা দেখা।’
গত ৮ জুন দুই বছর তিন মাস বয়সী সাইফকে নিয়ে তার মা, নানাসহ পরিবারের লোকজন চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন। তাঁদের অজান্তে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে হায়েনার খাঁচার কাছে চলে যায়। একপর্যায়ে কামড় দিয়ে সাইফের ডান হাত কনুই থেকে ছিঁড়ে নেয় হায়েনা।
সুমন মিয়া-শিউলি বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান সাইফ। সুমন মিয়ার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। শিউলি গৃহিণী।
সুমন-শিউলি দম্পতির ঘরে এবার ঈদের আনন্দ ছিল না। গ্রামে না গিয়ে গাজীপুরেই ঈদ করেছেন। সুমন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের হাত শুকায়নি। আর বাইরে গেলে মানুষ জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। এ জন্য ঘুরতে যাওয়া হয়নি।
হায়েনার কামড়ে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আলোচিত হয়েছিল। ফলে ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে যাঁরা চিড়িয়াখানায় আসছিলেন, তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল হায়েনাটি দেখা।
‘পরিবারের দোষ’ দেখছে তদন্ত কমিটি
হায়েনার কামড়ে শিশুর হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে, তা জানতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদারকে ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি। আর জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি।
অবশ্য নাম না প্রকাশের শর্তে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে এ ঘটনায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দোষ পায়নি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনার জন্য শিশুটির পরিবারকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুটিকে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার করে দিয়ে পরিবারের লোকজন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
তবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা সুমন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওদের (চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ) যদি দোষই না থাকে, তাহলে ওই জায়গা (নতুন করে দেওয়া আরেকটি নিরাপত্তাবেষ্টনী) ঠিক করল কেন?’ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল
শুক্রবার দেখা যায়, হায়েনার খাঁচার সামনে এখন তিন স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী। প্রথম নিরাপত্তাবেষ্টনী অতিক্রম করাই এখন আর কোনো দর্শনার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু হায়েনা শিশুটির হাত কামড় দেওয়ার আগে তিন নম্বর বেষ্টনী ছিল না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন যে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ, তা আগে থাকলে শিশুটি দুর্ঘটনার শিকার না-ও হতে পারত।
হায়েনার খাঁচার মতো বাঘ, সিংহ, ভালুকসহ অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর খাঁচা ঘিরেও আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগস্টে বাজেট পেলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারব।’