রবিবার | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ৭১ বছরে পা দিচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান ৭১ বছরে পা দিচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই)। উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৫৩ সালের আজকের দিনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সাত দশক অতিক্রম করে আজ ৭১ বছরে পা রাখছে।

দীর্ঘদিন যাবত গুণগত শিক্ষা প্রদান, গবেষক তৈরি, শিক্ষা-সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি রেখেছে অসামান্য অবদান।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় স্যাডলার কমিশন রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরে ১৯৫৩ সালে ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৫৩’ পাস হয়। ওই বছর ৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। যার মধ্যে ছাত্র প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং ছাত্রী ৩৬ শতাংশ। বর্তমানে ১২টি অনুষদের আওতায় ৫৮টি বিভাগে চার বছর মেয়াদি স্নাতক এবং এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এমফিল ও পিএইচডিসহ উচ্চতর গবেষণার জন্য এখানে রয়েছে ৬টি ইন্সটিটিউট। শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণা কাজে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনার দায়িত্বে রয়েছেন ১ হাজার ৯৮ জন শিক্ষক। এছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন ৮০৮ জন ও সহায়ক কর্মচারী ৭৭৬ জন। রয়েছেন একজন ইমেরিটাস ও একজন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক।

ঐতিহাসিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অসামান্য অবদান। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেকে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে অসংখ্য খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, কবি, লেখক, শিল্পী, খেলোয়াড়, নাট্যকার, অভিনেতা ও উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন থেকে শুরু করে বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক, অর্থনীতিবিদ সনৎ কুমার সাহা, প্রখ্যাত তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত বিচারপতি হাবিবুর রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অধ্যায়ন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় যথেষ্ট এগিয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গৌরবের।

উপাচার্য বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, গবেষণার সুনাম, প্রভাব, অভিনবত্ব ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে। ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা কমিয়ে আনতে দুটি আবাহক হল নতুনভাবে নির্মাণ করার পাশাপাশি আরও দুটা হল এবং শ্রেণিকক্ষ সংকটের সমস্যা নিরসনে আরও দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।

শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে আমরা ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। সেই সঙ্গে তাদের চাকরির বাজারে অগ্রাধিকারের জন্য আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ করেছি এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিমার আওতায় এনেছি। পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে নতুন চারটি বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারে ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা ৫ মিনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। এর পরে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী শেষে বৃক্ষরোপন করে এক আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হবে।

প্রি/রা/শা

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.