প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ মুত্যুর প্রায় আড়াই বছর পূর্বে হুইলচেয়ারে বসে একটি মঞ্চে উঠে গানটি গেয়ে শ্রোতাদের শুনিয়ে ছিলেন বাংলার প্লেব্যাক সিঙ্গার এন্ড্রু কিশোর। গাইবার সময় তিনি নিজে যেমন কেঁদেছিলেন তেমনি কাঁদিয়েছেন শ্রোতাদেরও। মুত্যুর আগে ঐ গানটিই ছিলো তাঁর শেষ গাওয়া গান।
কোটি কোটি হৃদয়ের প্রানের মানুষ এন্ড্রু কিশোর সকল ভক্ত ও শ্রোতাদের কাঁদিয়ে ২০২০ সালে ৬জুলাই ইহলোক ত্যাগ করে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে যান।
এই গুনি মানুষটিকে স্মরন করে রাখতে বৃহস্পতিবার ওস্তাদ আব্দুল আজিজ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে রাজশাহীতে এন্ডু কিশোরের সমাধিস্থলে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পূর্বে ওস্তাদ আব্দুল আজিজ স্মৃতি সংসদ এবং নৃবাগী সংগীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জী জানানো হয়। সেইসাথে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন ওস্তাদ আব্দুল আজিজ স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মঈনুল ইসলাম খোকন, সহ-সভাপতি কাজী সুলতান মাহমুদ ও সাবিনা আঞ্জুম শাপলা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শফি মাহমুদ লেলিন, প্রচার সম্পাদক সঞ্জু আহম্মেদ, অর্থ সম্পাদক শফিকুল আলম বাবু।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এন্ড্রু কিশোরের সহধর্মীনি লিপিকা এন্ড্রু, শিল্পি আব্দুল্লা ফিরোজ সহ আরো অনেকে।
এন্ড্রু কিশোরের সহধর্মীনি লিপিকা এন্ড্রু বলেন, তাঁর স্বামীর স্মৃতি রক্ষাতে দেশে একটি স্টার গ্যালারী করা প্রয়োজন। সেইসাথে তাঁর গান গুলো যেন হারিয়ে না যায় তার ব্যবস্থা করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে কণ্ঠশিল্পি আব্দুল্লা আল ফিরোজ বলেন, কালজয়ী এই শিল্পির স্মৃতি রক্ষার্থে রাজশাহীতে সড়ক কিংবা যেকোন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ও তাঁর একটি প্রতিকৃতি করা প্রয়োজন। এগুলো করার জন্য রাসিক মেয়রকে অনুরোধ করেন তিনি।
উল্লেখ্য এন্ড্রু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধী নেয়ার পরেও শরীরের অবস্থা ভাল না হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন । এরপর তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডাক্তার শিখা বিশ্বাসের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন এই শিল্পী।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন রাজশাহীতে। এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা হয় ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সেখানে তিনি ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানে কণ্ঠ দেন। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়া গান প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।
প্লে-ব্যাকে তার গানের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। অন্যতম জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।
গান গাওয়ার জন্য তিনি ৮বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সুরের এই কিংবদন্তী আজীবন বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি ভক্তর হৃদয়ে। তিনি যেন অপারে ভাল থাকেন, তারজন্য ভক্তরা ও পরিবারের পক্ষ থেকে প্রার্থনা করা হয়।
প্রি/রা/শা