প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা নাজমুস সাকিব। ঈদ উদযাপনে গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন তিনি। চলতি মাসের শুরুতে তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীতে রেফার করেন চিকিৎসকরা।
সুস্থ মানুষের শরীরে যেখানে প্লাটিলেটের পরিমাণ থাকে এক থেকে দেড় লাখ, সেখানে সাকিবের শরীরে প্লাটিলেট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজারে। দ্রুত রাজধানীর কল্যাণপুরের ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। গত দুদিনে ছয় ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে সাকিবকে। এক্ষেত্রে ব্যাপক বেগ পেতে হয়েছে তার বন্ধু-স্বজনদের।
সাকিবের বন্ধু ইসমাইল কালবেলাকে বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে আমরা হাসপাতালে দৌড়াচ্ছি। রক্তের যে কী সংকট, সেটি এই মুহূর্তে বুঝতে পেরেছি। শরীয়তপুর থেকেও ডোনার এসে রক্ত দিতে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে স্ট্যাটাস দিয়েও তেমন সাড়া পাইনি।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা ইয়াসমিন ফারহানার ভাই আসগর আলী হাসপাতালে তিন দিন ধরে ভর্তি। সেখানে ভর্তির পরপরই চিকিৎসকরা চার ব্যাগ রক্তের চাহিদার কথা জানান। গত ২৪ ঘণ্টায় রক্তের জন্য বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকে যোগাযোগ করেও চাহিদামতো রক্তের সন্ধান পাননি। মগবাজারের বাসিন্দা জামিল মাহমুদের মা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি।
মায়ের জন্য এক ব্যাগ প্লাটিলেট জোগাড় করতে বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিচ্ছেন। কিন্তু রক্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিপদে পড়লে বোঝা যায় রক্ত কতটা জরুরি। ঈদের ছুটিতে স্বজনরাও গ্রামে। বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হতে হচ্ছে।
শুধু রাজধানী নয়, গোটা দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চাহিদার অনুপাতে রক্তের জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতোমধ্যে দেশের ৫৭ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনো গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি। চলতি মাসের গত সাত দিনে দেশে ১৮ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য বলছে, সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি আরও বেশ কয়েক মাস সহ্য করতে হবে।
সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি আমির হোসেন সিয়াম কালবেলাকে বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি ও ঈদের ছুটির কারণে রাজধানীতে রক্তের চাহিদা অনুপাতে জোগান দিতে পারছি না। বিভিন্ন মাধ্যমে যত অনুরোধ আসছে, তার মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পূরণ করতে পারছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটি শেষে এখনো ফিরে আসেনি। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যাগ রক্তের চাহিদা পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে অধিকাংশ অনুরোধই রাখা যাচ্ছে না ডোনারের অভাবে।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয়, রুটিন চিকিৎসার জন্যও রক্তের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হচ্ছে। সেই অনুপাতে ডোনার বাড়ছে না। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে চাহিদার বিপরীতে রক্তের ডোনার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। কারণ, রাজধানীতে যারা স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়, তাদের একটা বড় অংশ শিক্ষার্থী। তারা শিক্ষাজীবন শেষ করে রাজধানী ছেড়ে যাওয়ায় রক্তদাতা কমে যাচ্ছে। তবে ঢাকার আশপাশে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ব্লাড ডোনার হাব গড়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও রক্তদাতাদের হাব তৈরি হচ্ছে।
দেশের সর্বশেষ অবস্থা: এদিকে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সারা দেশে ১৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭২ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ১১০ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ১ হাজার ৫২৮ এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে ৬৩৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ১১ হাজার ২৯৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধু ঢাকা মহানগরে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৭১ জন; ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৩২৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল মৃত্যু হওয়া একজনকে নিয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। সূত্রঃ কালবেলা।
প্রি/রা/শা