নিজস্ব প্রতিবেদক : তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এ বক্তব্য দিয়েই নির্ভার স্থানীয় প্রশাসন। অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাজশাহীতে চলছে সংরক্ষিত দিঘি ও পুকুর ভরাটের কাজ। একাধিকবার ভরাট ও বন্ধ নাটকের পর এবার ঐতিহ্যবাহী সুখান দিঘি ভরাট চলছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকানঘর।
এ দিঘিটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষণ তালিকায় রয়েছে। অথচ প্রকাশ্যে ভরাটের ঘটনা ঘটলেও এটি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। রাজশাহীতে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় বাণিজ্যিক উদ্দেশে একের পর এক বড় দিঘি ও পুকুর ভরাট হচ্ছে।
অথচ ২০২২ সালের ৮ আগস্ট এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগরীতে ৯৫২টি পুকুর ও দিঘি সংরক্ষণে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানছেন না কেউ। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোও এ ব্যাপারে রয়েছে নিশ্চুপ। আদালতের এ নির্দেশনা রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসন গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সুযোগে ভূমিদস্যুরা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে।
এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় ঘটলেও সেটি দেখার কেউ নেই। স্থানীয়রা বলছেন, মহানগরীর সপুরা এলাকার সুখান দিঘিটি ব্রিটিশ আমলের। আয়তন প্রায় ১০ বিঘা। একসময় এলাকার মানুষের পানির প্রধান উৎস ছিল এ দিঘি। সোমবার সকালে সুখান দিঘি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভরাট করা অংশটুকু বাদে এখনো দিঘিতে থইথই করছে পানি।
দিঘির উত্তর-পূর্ব কোনে অন্তত ১০টি দোকানঘর নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকরা। মাটি ভরাট শেষে দেওয়াল তোলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এ কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানান, রাজু নামের একজন তাদের কাজে লাগিয়েছেন। এর বেশি কিছু তারা জানেন না।
এ ব্যাপারে রাজুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এগুলো আমার দোকান না। আমি শুধু তদারকি করছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিঘিটি ভরাট করে দোকান নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন সম্পৃক্ত। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে কাউন্সিলর সোবহান বলেন, আমি কোনো দোকানঘর নির্মাণ করছি না।
অবৈধভাবে যারা এ কাজ করছেন তারা আমার নাম ব্যবহার করছেন। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এ বিষয়ে তদন্ত করলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।সুখান দিঘি ভরাটের বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন জানান, তারা ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছেন।
তবে ওইখানে নোটিশ করতে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে ভরাট করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধরেননি।
তবে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলাম। এরপর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এটি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) তদারকির দায়িত্ব। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে সেটি করা হবে।
এ ব্যাপারে আরডিএ-এর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কয়েজনকে নোটিশ করেছি। ভরাট বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে নোটিশের কপি সংশ্লিষ্ট বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।
প্রি/রা/আ