মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদ : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের সেই আলোচিত অধ্যক্ষ মো: সের্লিম রেজার বিরুদ্ধে এবার চাঁদাবাজি, প্রতারণা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে সাংবাদ সম্মেলন করেছেন বরখাস্ত হয়ে থাকা কয়েকজন শিক্ষক।

শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুর ১২ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ওই কলেজের বরখাস্ত হয়ে থাকা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন বিভাগের প্রভাষক আহাদুজ্জামান নাজিম।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সেরাজুল ইসলাম, সঙ্গীত বিভাগের প্রভাষক শাহিন আক্তার, আরবি বিভাগের প্রভাষক সাদিকুল ইসলাম এবং প্রকৌশল অংকন ও ওয়ার্কশপ প্র্যাকটিস বিভাগের ইন্সট্রাক্টর আবু সালেহ মোঃ নাজমুস সাদাত।

লিখিত বক্তব্য বলা হয়, কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজা অন্যায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৮ আট বছর থেকে হয়ে থাকা গভর্নিং বডির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাদুল হকের যোগসাজসে চাঁদাবাজি, প্রতারণা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার করে আসছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে সকলকেই অন্যায় ও বিধি বর্হিভূত ভাবে হেনস্থ, হয়রানি ও বরখাস্ত করে আমাদের দূরে ঠেলে রেখেছে। আমরা বড়ই অসহায়, বিপদগ্রস্ত এবং দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যায় ভাবে অধ্যক্ষ কর্তৃক সাময়িক বরখাস্তকৃত শিক্ষকগণ মানবেতর জীবন-যাপন করছি।

বিভিন্ন অনিয়ম গুলোর মধ্যে হলো-
১. মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং বিভিন্ন কৌশলে হয়রানি করে পরবর্তিতে মোটা অংকের চাঁদা দাবী।
২. জোর পূর্বক শিক্ষকদের প্রতিমাসের বেতন থেকে ৩% হারে চাঁদা কর্তন, দিতে না পারলে অধ্যক্ষের হয়রানী এবং চাকুরি থেকে বহিস্কারের হুমকি।
৩. অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত চাঁদাবাজি মামলায় সিআইডি এর তদন্ত রিপোর্টের প্রমান সাপেক্ষে আদালতের নির্দেশনায় অধ্যক্ষকে গ্রেফতারের পরোয়ানা জারি এবং ৯ জুলাই থেকে তিনি পলাতক।
৪. ৮ বছর ধরে দূর্নিতির আশ্রয় নিয়ে অবৈধবাবে শাহাদুল হককে গভর্নিং বডির সভাপতি বানিয়ে রাখা।
৫. একজনের ইনডেক্স নাম্বারে সুকৌশলে অন্যে আরেকজনকে বেতন ভোগ করানো।
৬. ২০২০ সালে করনোকালীন সময়ে অটোপাস করা ১৮০ জন শিক্ষার্থীদের ফরম পুরনের প্রায় ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ।
৭. সরকারের পক্ষ থেকে কলেজের আইসিটি ল্যাব এর জন্য প্রদত্ত ল্যাপটপগুলোর অধিকাংশই আত্মসাৎ। ৮. শিক্ষা নীতিমালা ও মহামান্য হাইকোর্টের রায়কে অবমাননা করা।
৯. শিক্ষকদের সাথে অধ্যক্ষর ন্যাক্কারজনক আচরন করা।
এর পাশাপাশি প্রভাষক আহাদুজ্জামান নাজিম সাময়িক বরখাস্ত উত্তোলন করে নিবে এই মিথ্যা কথা বলে কয়েক দফা সকলের সামনে জোর করে তার পা ধরতে বাধ্য করে এবং অধ্যক্ষর মেয়ে ওই কলেজেরই ছাত্রী তারও পা ধরতে বাধ্য করে এবং লাথি মেরে ফেলে দেয়।
এছাড়াও অধ্যক্ষ কর্তৃক কয়েকটি মিথ্যা রেজুলেশন এবং নিজ অফিস রুমে আরেকজন শিক্ষক ওমর কোয়ায়েশীর সহযোগিতায় অফিস রুমের দরজা বন্ধ করে আমাকে জবাই করে মেরে ফেলবে এভাবে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে ১০০টাকা মূল্যের তিনটি ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে জোর পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা এসব ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

এই বিষয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এর আগে রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠে। এছাড়াও ২০২২ সালের ৭ জুলাই রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেধড়ক পেটান । এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পাই। তবে সেই সময় এমপির পাশে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমপি তাকে পেটাইনি বলে দাবি করে। এতে করে প্রচুর সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ওই কলেজের শিক্ষক আহাদুজ্জামান নাজিমের চাঁদাবজি মামলায় প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় রাজশাহী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ৫ জুলাই ওয়ারেন্ট জারি করে। এর পর থেকেই সে পলাতক রয়েছে।

প্রি/রা/আ

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.