সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র কী

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর বেশ কিছু দিন পর থেকেই ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে আসছে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বা ট্যাক্টিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়াপন বিষয়টি। বিশেষ করে, রাশিয়া যখন পার্শ্ববর্তী বেলারুশে এই অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেয়, তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে।

শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন যে, বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটিতে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম চালান ইতোমধ্যে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রুশ নেতা বলেছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড কিংবা রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়লেই এ অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। এর আগে বেলারুশের পক্ষ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। এবার বিষয়টি নিশ্চিত করলেন পুতিন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ তথ্য জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এ বছর গ্রীষ্মকাল শেষে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হবে বলেও জানিয়েছেন রুশ নেতা।

এ অবস্থায় আবারও আলোচনায় এসেছে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বা ট্যাক্টিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়াপন বিষয়টি। এখন প্রশ্ন হলো— কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র কী, এর বৈশিষ্ট্যই বা কী, কিংবা শত্রু পক্ষকে ঘায়েল করতে এটি কতটা ভূমিকা রাখে?

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে বলেছে, কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র হলো— অপেক্ষাকৃত ছোট পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ডেলিভারি সিস্টেম, যা যুদ্ধক্ষেত্রে বা সীমিত স্ট্রাইকের (আক্রমণ) জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলোর বিস্ফোরণে ব্যাপক আকারে তেজস্ক্রিয় ছড়ায় না, বরং একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শত্রুর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার জন্য এই অস্ত্রের ডিজাইন (নকশা) করা হয়েছে।

ক্ষুদ্রতম কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র এক কিলোটন বা তার কম হতে পারে (এক হাজার টন বিস্ফোরক টিএনটির সমতুল্য উৎপাদন করে)। সবচেয়ে বড় কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ১০০ কিলোটনের মতো হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, তা ছিল ১৫ কিলোটন।

প্রকৃতপক্ষে, ট্যাক্টিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো বৈশ্বিক সংজ্ঞা নেই। এগুলোর বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয় সাইজ, তাদের পাল্লা এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এগুলোর সীমিত ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে।

এগুলো সাধারণ বোমা থেকে কিছুটা বড়। এগুলো বিস্ফোরণে রেডিওঅ্যাকটিভ বের হয় এবং বিস্ফোরণের বাইরে আরও বড় মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

ট্যাক্টিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্রগুলোকে নন-স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্রও বলা হয়। যেগুলো স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্রের বিপরীত। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী নন-স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে ‘শত্রুর যুদ্ধ তৈরি করার ক্ষমতা এবং যুদ্ধ করার ইচ্ছায়’ আঘাত করার জন্য। যার মধ্যে রয়েছে উৎপাদন, অবকাঠামো, যাতায়াত এবং যোগাযোগব্যবস্থাসহ অন্যান্য লক্ষ্য ধ্বংস করে দেওয়া।

অন্যদিকে ট্যাক্টিক্যাল অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে সীমিত এবং তাৎক্ষণিক সামরিক লক্ষ্য অর্জন করার জন্য।

এগুলো মিসাইল, বিমান থেকে ছোড়া বোমা এবং কামানের শেলের সঙ্গেও জুড়ে দেওয়া যায়, যেগুলো তুলনামূলকভাবে স্বল্পপাল্লার। এগুলো কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে ছোড়ার জন্য তৈরি করা বিশালাকৃতির ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল থেকে অনেক ছোট।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যালেক্স গাতাপোলাস বলেছেন, ট্যাক্টিক্যাল নিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ডাররা যেন সহযোগিতা পান। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে আরও শক্তিশালী থার্মারনিউক্লিয়ার বোমা তৈরি ও পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সামরিক পরিকল্পনাকারীরা মনে করেছিলেন, স্বল্পপাল্লার ছোট অস্ত্র ট্যাক্টিক্যাল ‘কৌশলগত’ পরিস্থিতিতে ব্যবহার উপকারী হবে।

তিনি আরও বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের একটি পরিবর্তনশীল ‘ডায়াল-আপ’ ইয়েল্ড আছে, মানে একজন অপারেটর এটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা ঠিক করে দিতে পারেন এবং একটি ট্যাক্টিক্যাল অস্ত্র কিলোটনের এক ভগ্নাংশ থেকে ৫০ কিলোটন পর্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে। হিরোশিমা ধ্বংস করেছিল যে বোমা সেটি ১৫ কিলোটন শক্তিশালী ছিল। এক কিলোটন এক হাজার টনের সমান।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.