নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইহাটি গ্রামের রুবেল হুসাইন সৌদি আরব যাওয়ার আগে থেকেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল একই গ্রামের মরিয়ম আক্তারের।
প্রায় ছয়মাস আগে ভিডিও কলে রুবেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সামনে ছুটি পেলে দেশে ফিরবেন। এরপর শুরু হবে সংসার। এমন আশা নিয়েই ছিলেন মরিয়ম আর রুবেল। কিন্তু তাদের সেই আশা আর পূরণ হলো না।
সৌদি আরবে অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন রুবেল। রুবেলের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তার স্ত্রী মরিয়ম। তিনি শুধু বিলাপ করছেন আর স্বামীকে ফিরে পেতে চাচ্ছেন।
শনিবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় রুবেল হোসাইনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মরিয়ম আক্তার মোবাইল ফোনে স্বামীর ছবি দেখে বিলাপ করছেন। তার আহাজারি দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও যেন সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
বিলাপ করতে করতে মরিয়ম আক্তার বলছিলেন, ‘আমার স্বামীকে একটাবার হলেও দেখতে চাই রে। স্বামীকে আমি কাছ থেকে দেখিনি রে। আপনাদের পায়ে ধরি, আমার স্বামীকে একনা এনে দেন রে ভাই। স্বামীকে কোনোদিন কাছ থেকে দেখিনি রে। যা দেখেছি দূরে থ্যাকা রে। যত কথা কছে দূরে থ্যাকাই কথা কছে রে। আমি মোবাইল ভাংগিছি তাই একটা কথা কইনি রে। সাথে সাথে মোবাইল কিনে দিয়েছে রে…।
মরিয়ম আক্তার জানান, সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দিনগত রাত ১২টার দিকে স্বামী রুবেল হুসােইনের তার শেষ কথা হয়। দেশে আসার জন্য শুক্রবার (১৪ জুলাই) কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিল রুবেল। শুক্রবার রাতে আবার কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। রাতে কলও দিয়েছিলেন মরিয়ম। কিন্তু রিং হলেও কেউ রিসিভ করেননি। রাত ৯টা পর্যন্ত ফোন বেজেছে। এরপর ফোন আর বাজেনি। শনিবার সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে জানান, রুবেল মারা গেছেন।
রুবেলের স্ত্রী মরিয়মের এখন একটাই চাওয়া স্বামীর লাশটা অন্তত একটিবারের জন্য দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকতে যখন স্বামীকে দেখতেই পেলাম না, অন্তত তার লাশটা তাড়াতাড়ি দেশে এনে দেন। শেষবারের মতো একবার দেখতে চাই।’
তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন রুবেল হুসাইন। স্থানীয় দালালকে ১৬ কাঠা জমি লিখে দেওয়া ছাড়াও দেড় লাখ টাকা নগদ দিয়ে ২০১৬ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান রুবেল। তার বড় দুই ভাই আগে থেকেই প্রবাসী। বড় ভাই সৌদি আরব এবং মেজ ভাই দুবাই থাকেন।
রুবেলের বাবা জফির উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের পছন্দেই আমরা মোবাইলে বিয়ে দিয়েছিলাম। ছেলে টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকায় বাড়িও বানানো হয়েছে। নতুন বউ আর বাড়ি দুইটায় ছেলে মোবাইলে দেখেছে। কোনোটিই ছেলে কাছ থেকে দেখে যেতে পারলো না।’
প্রি/রা/শা