নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে ‘ঘুষের’ ১০ লাখ টাকাসহ হাতে-নাতে গ্রেপ্তার সেই উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়াকে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমির হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমির হোসাইন জানান, সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া কর উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তাদের তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তাই কমিশন তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছিল। এজন্য সোমবার (২৪ জুলাই) আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আইনানুসারে এখন তার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু হবে।
এদিকে চার্জশিটে বলা হয়, রাজশাহীর বিশেষজ্ঞ নারী চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকা রাজশাহী কর অঞ্চলের একজন নিয়মিত করদাতা। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর তিনি সর্বশেষ ২০২২-২৩ করবর্ষের আয়কর বাবদ ১১ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৫ টাকা কর দেন।
কিন্তু আয়কর রিটার্ন দাখিলের কিছু দিন পর রাজশাহীর কর উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। একপর্যায়ে তিনি ওই চিকিৎসককে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। কার্যালয়ে যাওয়ার পর তাকে বলেন, দাবিকৃত ঘুষ না দিলে তার আয়কর নথিটি ফের খোলা হবে। এতে তার ভীষণ ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দেন কর উপ-কমিশনার।
তবে হুমকির পরও ওই নারী চিকিৎসক প্রথমে তাকে ঘুষ দিতে রাজি হননি। তাই মহিবুল ইসলাম এ চিকিৎসকের ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ করবর্ষের আয়কর নথি পুনরায় উন্মোচন করে নোটিশ দেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রাক যাচাই-বাছাই বা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও উদ্দেশ্য প্রণো দিত ভাবে এ চিকিৎসকের বিগত পাঁচ বছরের আয়কর নথি উন্মোচন করা হয়। কর কর্মকর্তা এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মনগড়াভাবে আয়কর ফাঁকির অভিযোগ করেন। এ কারণে পরে দাবিকৃত ঘুষ দিতে রাজি হন ওই চিকিৎসক।
এরপর রাজশাহীর কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া নারী চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকার আয়কর নথিটি হালনাগাদ ও আয়কর অধ্যাদেশ-৯৩ ধারায় উন্মোচন মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেবেন বলে কয়েক কিস্তিতে সর্বমোট ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা ঘুষের প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা নিয়ে রাজশাহী কর কার্যালয়ে যান। আর প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময়ই তিনি দুদক টিমের কাছে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার হয়।
৪ এপ্রিল দুপুরে অভিযান চালিয়ে রাজশাহী কর অঞ্চলের সার্কেল-১৩ (বৈতনিক) এর উপ-কর কমিশনার মুহিবুল ইসলাম ভূইয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। এরপর গত ৬ এপ্রিল তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়
প্রি/রা/আ