সোমবার | ৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঙ্গা হতে যাচ্ছে রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে ঝিম ধরে থাকা যুবলীগ অবশেষে চাঙ্গা হতে যাচ্ছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর মহানগর ও ৩ সেপ্টেম্বর জেলা যুবলীগের সম্মেলন। সাত বছর পর এই সম্মেলনের আয়োজন।

নেতৃত্বের একঘেয়েমি কাটিয়ে এবার রাজপথে সরব হতে চান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এতদিন রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ও বয়স্করা নেতৃত্ব ধরে রাখায় সরকারবিরোধী তৎপরতা রুখে দিতে মাঠে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি সংগঠনটি। তবে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসার খবরে বেশ উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। আগামী দিনে চ্যালেঞ্জের রাজনীতিতে রাজশাহীর রাজপথে জ্বলে উঠতে চান তারা।

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের বর্তমান সভাপতি রমজান আলী বলেন, সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক আদেশে সম্মেলনের দিন ধার্য করে মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছি। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার বর্ধিত সভা হয়েছে। এতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ মার্চ মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে আগের কমিটির সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে আবারও একই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে প্রায় ২০ বছর ধরে তারাই মহানগর যুবলীগের নেতৃত্বে রয়েছেন। তবে এবার প্রার্থী হচ্ছেন না বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দলের হাইকমান্ডে তারা জীবনবৃত্তান্ত জমাও দেননি।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২৮ জন নেতা তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবারের সম্মেলনকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা।

অপরদিকে, সর্বশেষ রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। ওই সম্মেলনে আবু সালেহ ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এ এইচ এম খালিদ ওয়াসি কেটু। ফলে ২০ বছর ধরে জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে রয়েছেন আবু সালেহ।

গত ফেব্রুয়ারীতে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পদ-প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত নিয়েছে দলটি হাইকমান্ড। জেলা যুবলীগের দুই পদের জন্য ২২ জন নেতা তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৩ জন।

পদ প্রত্যাশীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের পরই সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ সবচেয়ে শক্তিশালী। গেল ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহীতে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি যুবলীগ। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল নেতাকর্মীদের মাঝে। এমনকি মূল দল আওয়ামী লীগের মাঝেও হতাশা ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগে এখন বেশ উজ্জীবিত সবাই।

যুবলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, এবার তরুণ নেতৃত্ব দেখতে চান তারা। এজন্য উদ্যমী ও জনপ্রিয় নেতাদের শীর্ষ দুটি পদে দেখতে চান। যারা কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকেছেন।

মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, তারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদকসেবী বা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে নেতৃত্বে দেখতে চান না। এক্ষেত্রে তারা মহানগর যুবলীগে প্রায় দেড় যুগ ধরে টানা নেতৃত্বে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমাপ্তি ঘটিয়ে নতুন নেতৃত্ব চাইছেন। তাদের প্রত্যাশা কর্মীবান্ধব যুবলীগের স্মার্ট যুবনেতা।

তারা মনে করেন, রাজশাহীতে দলের অবস্থা ধরে রাখতে যারা সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করছেন তারাই যুবলীগের নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসবেন।

সংঠনের একাধিক সূত্র জানায়, সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি। সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে রনি গেল সাত বছর ধরে শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় তৃণমূলকে উজ্জীবিত রেখেছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন তিনি। মহানগরীর ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডেই যুবলীগকে শক্তিশালী করেছেন।

এর বাইরে সভাপতি হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মুখলেছুর রহমান মিলন ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন।

তৌরিদ আল মাসুদ রনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। আমি দীর্ঘ সময় মাঠে থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীদের পাশে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খায়রুজ্জামান লিটনের হাতকে শক্তিশালী করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। সম্মেলনে কে কে নেতা নির্বাচিত হবেন সেটিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দই সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় আছেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান। তিনি বলেন, আমরা চাই কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব। যেন সংগঠনটা রক্ষা হয়।

এছাড়াও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ। তিনিও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা। এ কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়।

অপরদিকে, জেলা যুবলীগের সভাপতি পদের জন্য নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেছা তালুকদারের ছেলে মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল। কোন পদে না থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি ছাড়াও সভাপতি পদের জন্য বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টুও রয়েছেন আলোচনায়।

আর সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে মাঠে রয়েছেন মোবারক হোসেন মিলন, ওয়াসিন রেজা লিটন, সামাউন ইসলাম, রফিকুজ্জামান রফিক, কামরুল ইসলাম মিঠু, জৌলুস মাহমুদ জেম্স, মোকাদ্দেস আলী, মুক্তার হোসেন, মেরাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, সেজানুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ রুনু, মামুন আর রশিদ।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা বলেন, যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান। তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতীত রেকর্ডও পর্যালোচনা করেছেন। যারা দলের জন্য নিবেদিত হিসেবে অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন ও আগামীতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবেন তারাই নেতা নির্বাচিত হবেন।

প্রি/রা/শা

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.