নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন রামচন্দ্রপুর মৌজার সাধুরমোড় রানীনগর এলাকায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমতি ব্যতীরেকে ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রাখার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বাটোয়ার মামলা চলমানবস্তায় জবরদখল পূর্বক আইন অমান্য করে বিবদমান জায়গায় বাড়ি নির্মাণ চলমান রয়েছে বলেও অভিযোগ বাদীপক্ষের।কর্তৃপক্ষের কাছে করা অভিযোগ সুত্র থেকে জানাগেছে, ঐ এলাকার মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে মোজাহারুল ইসলাম ও মেয়ে সুরাইয়া বেগম নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, বিবদমান জায়গাটি নিয়ে সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত রাজশাহীতে একটি বাটোয়ারা মামলা চলমান। যার মামলা নং ১০০/২০২২। মামলাটির বাদী অভিযুক্তদের আপন ভাই সাইফুল ইসলাম। পিতা মাতা মৃত্যুর পর দশ ভাই বোন ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে উক্ত পৈত্রিক সম্পত্তি কোন প্রকার বন্টন দলিলমূলে ভাগবাটোয়ারা না হবার পরেও অভিযুক্ত দুই ভাই বোন জোড়পূর্বক পৈত্রিক সম্পত্তির একাংশ দখল করে কলামের বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করলে সাইফুল নিষেধ করতে গেলে অভিযুক্তরা সহ তাদের ছেলে মেয়ে ও অন্যান্য স্বজনরা সাইফুল ও তার পরিবারকে নানাভাবে হেনস্থা করে।
বাড়ি নির্মাণে বাঁধা দিলে মারমুখি আচরণ সহ ভয়ভীতি প্রদর্শণ নিয়মিত হয়ে উঠায় নিরপত্তার স্বার্থে তিনি আইনের আশ্রয় নেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বিবদামান জমিটি নিয়ে চলমান সমস্যা আর সৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাসে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে পিটিশন মামলা নং-২৫৯পি/২০২১ এর পেক্ষিতে বোয়ালিয়া থানা বিবদমান সম্পত্তিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নোটিশপূর্বক নির্দেশ প্রদান করলেও অভিযুক্তরা এখনো নিয়মিতভাবে হুমকি ধামকি প্রদর্শন সহ অবৈধ নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছেন বলে অভিযোগ বাদীর।
জোড়পূর্বক দখল করা পৈত্রিক ভিটাতে অবৈধ বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য গত ২৮-৮-২০২৩ ইং তারিখে মোহনপুর থানা সহঃ জজ আদালতের মামলা নং ২৪৭/২২ প্রেক্ষিতে বাদীর আইনজীবি বিবদমান জমিটির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মহামান্য আদালতের কাছে একটি আবেদন করেন। বাদী সাইফুল ইসলাম আরো জানান, ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত বিবাদীদেও অনূকুলে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। বিবাদী প্রথম দফায় সেই আদেশনামা গ্রহণ না করলেও পরবর্তীতে সেটি আদালত থেকে সরাসরি গ্রহণ করেন। কিš‘ এখনো পর্যন্ত সেই আদেশের কোন জবাব বিবাদীপক্ষ আদালতে দেননি বলেও জানান বাদী সাইফুল।
অবৈধ নির্মাণকাজ কেনো বন্ধ করা হবেনা জানতে চেয়ে ‘আরডিএ’ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অভিযুক্তদের বরাবর প্রেরিত কারণ দর্শানোর নোটিশের সন্তোষজনক উত্তর ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ গত ২৫-০৫-২২ তারিখে ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ৩ ধারা মোতাবেক পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও উক্ত মৌজার আরএস-২০১৩ নং দাগের নালিশী সম্পত্তিতে অভিযুক্তরা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন বলে দাবি সাইফুলের। অভিযোগের সত্যতাও মেলে সরেজমিন গিয়ে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত সুরাইয়া বেগম ও তার অন্যান্য স্বজনরা প্রতিবেদকে বলেন, আমরা ‘আরডিএ’ থেকে ‘এনওসি’ নিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি দেখতে চাইলে তারা টালবাহানা শুরু করেন। অবশেষে সেগুলো দেখাতে না পেওে অন্য বিবাদী সুরাইয়ার ভাই মোজাহারুল ইসলামের কাছে আছে বলে জানান। মোজাহারুলকে ফোন দেবার কথা বললে অভিযুক্তরা বলেন, বাটোয়ারার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা হলে আমি এই বিবদমান অংশটিই পাবো! তারা অভিযোগ করে বলেন, এই মামলার বাদী আমাদের ভাই সাইফুল ইসলাম নিজেই তো সামনের দিকে অনেক বেশি জায়গা নিয়ে বসবাস করছেন। তাতে কোন দোষ নাই? কিš‘ বাদীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে সাইফুল বলেন, সাত কাঠার পৈত্রিক সম্পত্তির মধ্যে আমি মাত্র এক কাঠার মতো জায়গা নিয়ে কোনরকম বসবাস করছি। আমার বাসার দেয়ালগুলো ইটের গাঁথনি। মা-বাবা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এখানেই থাকতো। আমার বাবার সাত কাঠার অংশীদার আমরা নয় ভাই বোন। এক ভাই এক বোন মারা যাকার কারণে তাদেও সন্তানরা এখন অংশীদার। বাটোয়ারামূলে যে যার অংশ পাবার পর বৈধ পন্থায় বাড়ি নির্মাণ করলে সবারই ভাল হবে। কিন্তুও তারা আমার এই কথা আমলে না নিয়ে জবর দখল মনোভাবে বাড়ি নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
এবিষয়ে বোয়ালিয়া থানা কর্তৃপক্ষ জানায়, তর্কিত সম্পত্তিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশ অমান্য হলে আমরা অব্যশই আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
প্রি/রা/শা