বৃহস্পতিবার | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী-০৫ আসন: বর্তমান ও সাবেক এমপির কোন্দলে হিরা বাচ্চুই ভরসা

বিশেষ প্রতিবেদকঃ রাজশাহী-০৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ আসনের দুই উপজেলাতে রাজনীতির মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু।

আর এতে স্থানীয় রাজনীতিতে চলছে নতুন সমীকরণের হিসেব-নিকেশ। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান ও সাবেক সংসদের রাজনৈতিক কোন্দলের টানাটানিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হবে জি এম হিরা বাচ্চু।

রাজশাহী-০৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের দুটি পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছেন পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু। মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুই পৌরসভা এলাকা,  বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও জনসম্মুখে গণসংযোগ করে চলেছেন।

এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সম্পর্কিত লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুন জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে নিয়মিত প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে নিজের আদর্শ, মেধা ও দূরদর্শিতা দিয়ে রাজশাহী-৫ আসনের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে চান আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জি এম হিরা বাচ্চু আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এ আসনে তার বিকল্প নেই। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে কোনো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য হতে দিবেন না বলে বিশ্বাস করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হবার পর থেকেই এ উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জি এম হিরা বাচ্চু। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার প্রচারণার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের একটি ছিলো ‘মাদকমুক্ত একটি উপজেলা’ গঠন করা। তাই পুঠিয়া উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

স্থানীয় সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ জি এম হিরা বাচ্চু নিজ উদ্যোগে ‘পুঠিয়া ফুটবল একাডেমি’ নামে একটি ক্রীড়া সংগঠন গড়ে তুলেছেন। সেই একাডেমির খেলোয়াড়রা জাতীয় পর্যায়সহ দেশের বিভিন্ন ক্লাবে গর্বের সঙ্গে খেলে যাচ্ছে। দেশের পাশাপাশি দেশের বাহিরেও খেলেছে এ একাডেমীর খেলোয়াড়রা। এমনকি এ একাডেমি থেকে ব্রাজিলে গিয়েও ফুটবলের প্রশিক্ষণ নেবার সুযোগ পেয়েছেন অনেকেই।

জানা গেছে, জি এম হিরা বাচ্চু মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পুঠিয়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মুজিব মঞ্চ নির্মাণ করেছেন। উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতিযোগীতা তৈরিতে মেধাবীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ ও টিফিন বক্স বিতরণ করেছেন।

এছাড়াও এ উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপহার স্বরুপ দিয়েছেন। এ উপজেলার ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে ভিক্ষুকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বচ্ছল জীবন-যাপনের জন্য বিতরণ করেছেন গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগিসহ বিভিন্ন সামগ্রী।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরিপের মাধ্যমে রাজশাহী-০৫ আসনে মনোনয়ন দিলে নিশ্চিতভাবে তিনি মনোনয়ন পাবেন। করোনা মহামারীর সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দিয়েছেন নগদ অর্থ ও খাবার। দিয়েছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। শীতার্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করেছেন কম্বল বিতরণ। ঈদ উৎসব থেকে শুরু করে প্রতিটি বিশেষ দিনে সহযোগিতা নিয়ে ছুটে যান নির্বাচনী দুই উপজেলার অসহায় হত-দরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি।

নেতাকর্মীরা আরও জানান, অতীতে যারা এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন তারা বিজয়ী হলেও এ দুই উপজেলার মানুষদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেনি। তাই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে এ আসনের তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, এবারের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যেনো জি এম হিরা বাচ্চুকেই মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতেই থাকবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার গণ্ডগোহালী গ্রামের সন্তান জি এম হিরা বাচ্চু। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের হাতে নির্যাতিত ও গ্রেফতার হন তিনি। বিএনপি-জামায়াত সরকার, সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও বারবার গ্রেফতার, ডিটেনশন ছিল তার জীবনের অংশ। জীবন বাজি রেখে তবুও তাকে থাকতে হয়েছে রাজনীতির মাঠে।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে ১৯৮৯ সালে নিজ উদ্যোগে পুঠিয়ায় গঠন করেন সূর্যোদয় ক্লাব। সেখানে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপরে ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পুঠিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুঠিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরের কমিটিতে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এরপরে নতুনভাবে যাত্রা শুরু হয় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ১৯৯৬-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। পরের কমিটিতে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে ২০০৩ সালের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের বিপুল ভোটের ব্যবধানে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত সফলভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

জি এম হিরা বাচ্চু জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালীন জেলার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে দিয়েছেন এবং সে সময়কে রাজশাহীতে ছাত্রলীগের স্বর্ণযুগ হিসেবে ধরা হয়৷ ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনের পরই রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ লাভ করেন।

অতীতের দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-০৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পর্যবেক্ষক ও সমন্বয় উপ-কমিটির সদস্য হয়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়ী করতে মূখ্য ভুমিকা পালন করেন।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত নৌকার মনোনয়ন পেয়ে স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

জানতে চাইলে জি এম হিরা বাচ্চু বলেন, আমি সেবক হিসেবে সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে চাই। ‘প্রধানমন্ত্রীর সারা দেশের উন্নয়নের চিত্র সম্পর্কিত লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি গণসংযোগ করে যাচ্ছি। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিটি সময় দেশের সংকটাপন্ন মুহুর্তে জনগণের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবো বলে আমি বিশ্বাস করি।’

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতি আরও বলেন, দুই উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটাররা এরই মধ্যে আমার পক্ষে মাঠে নেমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর হয়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হবে। এছাড়া যেকোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রি/রা/তো

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.