নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে মহান মুক্তিযুদ্ধে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় চার নেতা। জাতীয় চার নেতা জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্তু বেঈমানি করেননি। নিজেদের জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য, অসীম সাহস ও দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন জাতীয় চার নেতা। এখান থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অটুট থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে পিতার মতো আমরা নিজেরাও জীবন দিয়ে যাব।
৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস ও জাতীয় চারনেতা স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন “স্লোগান৭১” এর আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান অতিথি রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যবৃন্দ সহ অতিথিরা। এরপর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এবং ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস নিয়ে বড় করে আলাদা সাবজেক্ট হিসেবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেখান থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
রাসিক মেয়র বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে নানান ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। এই সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকমীদের অনেক কিছু করার আছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কারো প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচন হবে না। ভারত, ইংল্যান্ড সহ উন্নত বিশ্বে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে।
সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কন্যা ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, আমার আমার আব্বাকে জেলখানায় দেখতে গেলাম, অনেক কথা হলো। আম্মা আব্বাকে বললো আপনার দুই মেয়ে আপনাকে নিয়ে খুব চিন্তা করে। আব্বা বললেন চিন্তা করোনা, আমি খুব শ্রীঘই তোমাদের কাছে চলে আসবো। ৪তারিখ বিকালবেলায় জেলখানা থেকে আমাদের কাছে একটি ফোন আসলো, আব্বা হয়ে গেলো মৃতদেহ। আব্বা কথা রেখেছেন তিনি ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসলেন, কিন্তু নিথরদেহে।
তিনি আরো বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে, শতবাঁধা উপেক্ষা করে নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক নিয়মে। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর দৌহিত্র ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, মানবজাতির ইতিহাসে জঘন্যতম দিন ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। মৃত্যু অবধারিত জেনেও খন্দকার মোস্তাকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন জাতীয় চার নেতা। এই সাহস ও ত্যাগ এবং নেতার প্রতি আনুগত ও দেশের প্রতি ভালোবাসা বিরল।
তিনি আরো বলেন, খুনীদের উত্তরসূরী দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এই প্রজন্ম আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময় জাতীয় চার নেতার ত্যাগ ও সাহস নিয়ে যতটুকু এগিয়ে যেতে থাকব, এই মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে সেটি ততটা সহযোগিতা করবে।
সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এর জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ রিপি বলেন, আমার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তিনটি দাবি জানিয়েছি। দাবি তিনটি হলো, ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা। এগুলো আমাদের তুলতে হবে কেন, এগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে দাবিগুলো বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন, এটি আমাদের জন্য সুখবর।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও বিদুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন।
‘স্লোগান’৭১ এর সভাপতি নয়ন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অমির সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিক ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, স্লোগান’৭১ উপদেষ্টা ও ‘জাহাজী’র সহ-উদ্যোক্তা কাজল আব্দুল্লাহ, স্লোগান’৭১ সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ভূঁইয়া ফয়েজউল্লাহ মানিক প্রমুখ।
প্রি/রা/তো