মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগুন দেওয়া গাড়ির ক্ষতিপূরণ মিলবে কীভাবে?

প্রিয় রাজশাহী ডেস্ক: দীর্ঘদিন পর আবারও রাজপথে ফিরে এসেছে হরতাল-অবরোধ। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই দিন এবং পরের দিন ২৯ অক্টোবর হরতালে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফায় চলমান অবরোধের দিন ও আগে-পরে গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিনে মোট কতটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, তার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও এ সময় শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এসব গাড়ির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে  ক্ষতিপূরণ মিলবে কীভাবে, এ প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।

বিরোধীদের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিকদের অতীতের মতো সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলজিয়াম সফর নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলন এ ঘোষণা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব গাড়ি পুড়িয়েছে, ২০১৩, ২০১৪ ও ১৫ সালে একই রকম অবস্থা। তিনটি বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর আক্রমণ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে তারা ব্যবসাটা চালাতে পারে। আহত নিহতদের আমরা সহায়তা দিয়েছি। এবারও যাদের বাস পুড়েছে তাদেরটা সরকার দেখবে।’

১৩ দিনে ১৩১ গাড়িতে আগুন

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত (১৩ দিন) সারা দেশে ১৩১টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর ১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি, ৬ নভেম্বর ১০টি, ৭ নভেম্বর ১টি, ৮ নভেম্বর ১৩টি এবং ৯ নভেম্বর ৭টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৯২টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ১৩ দিনে ভাঙচুরের শিকার গাড়ির সংখ্যা ২০০টি। তবে সিমিতির একটি সূত্র বলছে, অগুন দেওয়া গাড়ির সংখ্যা শতাধিক।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন এলাকায় গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৪টি গাড়িতে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে ৬৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ৬৪টি মামলা হয়েছে। পরিবহনে আগুনের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১২ জনকে আটক করা হয়।

ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দুই উপায়

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্নিসংযোগ করা বা ভাঙচুরের শিকার গাড়ির ক্ষতিপূরণ পেতে দুই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এক. পুড়ে যাওয়া গাড়িটি যদি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইন্স্যুরেন্স করা থাকে। তাহলে সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বরাবর আবেদন করতে হবে। দুই. বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন করতে হবে। ২০১৮ সালের সংশোধিত সড়ক পরিবহন আইনে ইন্স্যুরেন্সের বদলে বিআরটিএ’র মাধ্যমে কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।তবে গাড়ির মালিক চাইলে সরাসরি ইন্স্যুরেন্স করতে পারবেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী মাহবুবুর রহমান জানান, ‘বিদ্যমান আইনে ইন্স্যুরেন্সের বিধান নেই, আছে কল্যাণ ট্রাস্ট। তবে কোনও গাড়ির মালিক চাইলে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সও করতে পরেন। আইনে বাধ্যবাধকতা না থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গাড়ির ইন্স্যুরেন্স করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয় না। ২০১৮ সালের আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এভাবেই চলছে।

তিনি জানান, বিআরটিএ’র কল্যাণ ট্রাস্ট একটা কমিটি দেখভাল করে থাকে। এই কমিটির চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও অন্য স্টেকহোল্ডাররা কমিটির সদস্য। কোনও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হলে, কিংবা ভাঙচুর করা হলে সংশ্লিষ্ট মালিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে এখানে আবেদন করে থাকেন। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিক আবেদন করলে বিষয়টি যাচাই-বাছাই ও খতিয়ে দেখে এই কমিটি ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।

মাহবুবুর রহমান জানান, হরতাল, অবরোধ ও  আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিকদের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর বরাবর দরখাস্ত করবেন। পরে সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

যেভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা নির্ধারণ হয়

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, পুড়ে যাওয়া  বা ভাঙচুর করা গাড়ি  গ্যারেজে নিয়ে মেরামত করতে কত টাকা লাগবে, সেটি ঠিক করতে হবে। যারা মেরামত করবে, তারা একটা দরপত্র দিলে মালিকরা সেটি সমিতির কাছে জমা দেবে। এরপর সেটা যাচাই-বাছাই করে ক্ষতির টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হলে সরকারিভাবে আবারও যাবাই-বাছাইয়ের পর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ক্ষতিপূরণের টাকা নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গাড়ির ক্ষতির ওপর নির্ভর করে টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সূত্রমতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিনে শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হলেও ৩৬টি গাড়ির ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে। আরও অনেকে  আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খবর- বাংলা ট্রিবিউনের

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.