মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২ বছরে রাজশাহীর বাতাসে ধূলিকণা বেড়েছে দেড়গুণ

প্রিয় রাজশাহী ডেস্ক: রাজশাহী নগরীর বাতাসে বাড়ছে ধূলিকণা। গত দুবছরে বাতাসে ধূলিকণা বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। ফলে নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে।
সম্প্রতি জেলার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, রাজশাহীর বাতাসে দূষণের পরিমাণ ফের বেড়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উপাত্তের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহীর বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম। এটা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৬৩ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রামে।

দুবছর আগে এ শহরে আরও ক্ষুদ্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৬ সালে এটি প্রায় অর্ধেক হয়ে দাঁড়ায় ৩৭ মাইক্রোগ্রাম।

রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার (১১ নভেম্বর) নগরের পাঁচটি স্থানে বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। সংস্থাটি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ পরীক্ষা চালায়। পরে বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়।

সংগঠনটি নগরের তালাইমারী মোড়, এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর, সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর মোড় ও বিসিক মঠপুকুর এলাকায় পরীক্ষা চালায়। প্রতিটি স্থানে পরীক্ষা চালানো হয় আধাঘণ্টা করে।

বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং আরও ক্ষুদ্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা হয়। সেখানে তালাইমারী মোড়ে ১০ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাওয়া গেছে ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম। একই স্থানে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাওয়া গেছে ৯৭ মাইক্রোগ্রাম।

এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে এ পরিমাণ যথাক্রমে ২৩১ ও ৯৩ মাইক্রোগ্রাম, সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ২২৫ ও ৮৮ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর মোড়ে ২২৯ ও ৯৪ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক এলাকায় ২২২ ও ৭৬ মাইক্রোগ্রাম।

এর আগে চলতি বছর ৫ এপ্রিল ওই পাঁচ স্থানে পরীক্ষা চালানো হয়। তখন পরীক্ষায় তালাইমারী মোড়ে ১০ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ১২৭ মাইক্রোগ্রাম। ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে এ পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১১৪ ও ৮৪ মাইক্রোগ্রাম, সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ৯৪ ও ৬৬ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর মোড়ে ১১০ ও ৮০ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠপুকুর এলাকায় ৯৬ ও ৬৮ মাইক্রোগ্রাম।

বারিন্দ এনভায়রনমেন্টের সহযোগিতায় রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানের বাতাসে বিদ্যমান বস্তুকণা ২০২২ সালের ৫ মার্চ পরিমাপ করা হয়। ওই সময় দেখা যায়, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৭৬ এবং ৮৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, যা ২০১৪ সালের থেকে যথাক্রমে ১২ দশমিক ১ ও ৪৮ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার বেশি। এসময় রেলগেট এলাকায় পাওয়া যায় ৭৩ ও ৮৪ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, বিসিক মঠ পুকুর এলাকায় ৫৬ ও ৬৮ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৭১ ও ৮০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং সাহেব বাজার এলাকায় ৫৫ ও ৬৬ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পিএম ২ দশমিক ৫ বাংলাদেশের নির্ধারিত ঘনমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি হলেও প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পিএম ১০ এর পরিমাণ নির্ধারিত ঘনমাত্রার চেয়ে অনেক কম। পর্যবেক্ষণে বিসিক মঠ পুকুরের কাছে বায়ুর মান তুলনামূলক বেশ ভালো পাওয়া যায়।

২০২২ সালের ২০ আগস্ট শুষ্ক মৌসুমে একযোগে ওই পাঁচটি স্থানে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছিল। এতে বায়ুতে সর্বোচ্চ পিএম ২ দশমিক ৫ এবং পিএম ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৪১ ও ৪৯ মাইক্রোগ্রাম। রেলগেট এলাকায় ৩৮ ও ৪৬ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠ পুকুর এলাকায় ৩৭ ও ৪৫ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৩৭ ও ৪৫ মাইক্রোগ্রাম এবং সাহেব বাজার এলাকায় ৩৫ এবং ৪২ মাইক্রোগ্রাম। তবে পরীক্ষা চলাকালে আকাশ মেঘলা ছিল এবং মৃদু বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে বাতাসের ধূলিকণা কিছুটা কম এসেছে।

রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে শনিবারের পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন পিএইচডি গবেষক ও সংস্থাটির কোষাধ্যক্ষ অলি আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রকৌশলী ও সংস্থার সভাপতি মো. জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ, সদস্য শামসুর রাহমান।

সংস্থাটির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, সব স্থানেই বায়ুর মান তুলনামূলক খারাপ পাওয়া গেছে। এ ধরনের বায়ু মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। রাজশাহী শহরে অনেক নির্মাণকাজ চলছে বর্তমানে। এ কারণেও দূষণটা একটু বেশি। আমাদের পরীক্ষায় গত দুবছরে প্রায় দেড়গুণ বেশি বায়ু দূষণ ধরা পড়েছে। আমাদের এখনই সচেতন না হলে এটি আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণকাজ পরিচালনার জন্য কতগুলো নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে। সেগুলো মেনে চললে বায়ুদূষণটা কমানো যেত। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপাদান ঢেকে রাখা, নির্দিষ্ট সময় পরপর পানি ছিটিয়ে দেওয়া, নির্মাণসামগ্রী বহনের সময় ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে। কিন্তু এগুলো মানা হচ্ছে না। এছাড়া আগের তুলনায় রাজশাহীতে বড় গাছের সংখ্যা কমেছে। গাছ বেশি বেশি লাগাতে হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম বলেন, এমন কোনো পরীক্ষার কথা আমার জানা নেই। তারা যদি এমন পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে থাকে তবে আমাদের কাছে পাঠাক। আমরা তো আইন মানার জন্য ঠিকাদারদের বলি। এরপরও অনেক সড়কে আমরা বালু দেখতে পাই। বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো। সূত্র: জাগোনিউজ

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.