চলনে বলনে শান্ত, নাদুস-নুদুস চেহারা। পুরো শরীর জুড়ে মাংস আর মাংস। সাদা ও কালো রঙের সংমিশ্রণে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড়টি দেখতে খুবই সুন্দর। তাই তার নাম রাখা হয়েছে চৌধুরী। প্রথম দেখাতে যে কেউ পছন্দ করবেন।
এবারের কোরবানির প্রধান আকর্ষণ। লোকজন আসছেন, দেখছেন। দামও করছেন কেউ কেউ। এটি রাখা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাঁশবাড়ি এলাকার মেসার্স ইউসুফ হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ডেইরি ফার্মে। ৩৩ মণ ওজনের চৌধুরীর দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
খামারটিতে চৌধুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের গরু প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশি, শাহিবল, শংকর, ফ্রিজিয়ান ও নানা জাতের ষাঁড়।
এখানে ৫৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকার ষাঁড়ও রয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে এসব গরু লালন-পালন করে মোটাতাজা করা হয়েছে। বিশেষ করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খুদের ভাত, আলু সিদ্ধ, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, ঘাস, চোকর, বুটের খোসা, ভুট্টা, গম ইত্যাদি খাবার খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট থাকছে গরুগুলো। ফলে এ খামারের গরুর চাহিদা বেশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খামারটির মালিক জামিল আশরাফ মিন্টু ষাঁড়টির যত্ন করছেন। ঘাস, ভুট্টাসহ দেশীয় খাবার দিচ্ছেন চৌধুরীকে। বিশাল দেহের গরুটি দেখতে এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত ভিড় করছে।
খামারের মালিক জামিল আশরাফ মিন্টু জানান, পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে ছোটো সাইজের গরু পাশের ঢেলাপীর, তারাগঞ্জ, রানীরবন্দর, শাখামাছা, বেনীরহাটসহ বিভিন্ন হাট থেকে কিনে আনা হয়। ছোট ছোট গরুগুলো লালন-পালন করে কোরবানির উপযোগী করে তুলেছেন তিনি।
খামারের গরু মোটাতাজাকরণে কোনো ধরনের ইনজেকশন, ট্যাবলেট বা ওষুধ ব্যবহার করেন না। খামারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রয়েছেন। সাতজন শ্রমিক ও নিজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোরবানির জন্য গরুগুলো বড় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে মাত্র চারটি গরু নিয়ে হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ডেইরি ফার্মটি চালু করেছি। আর এখন বিশাল শেডে প্রায় ৩০০ ষাঁড় রয়েছে। এবার গোখাদ্যের দাম বাড়ায় খামারিদের কষ্ট হয়েছে। তাই সেভাবে দাম চাওয়া হচ্ছে। আমরা শুধু ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য গবাদিপশু নয়, বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যও মাংস সরবরাহ করে থাকি।
এছাড়া গবাদিপশু বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সনদপত্র দেওয়া হয় এখান থেকে। এসব কারণে এ খামারের গরুর চাহিদা বাড়ছে। এজন্য মাংস কাটার মেশিন আনার চিন্তা করছেন মালিক। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খামারটি পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন। জামিল আশরাফ মিন্টু পেয়েছেন অগণিত উদ্যোক্তা পুরস্কারও।
জামিল আশরাফ মিন্টু বলেন, আমার খামার থেকে ২০০টি গরু ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চৌধুরী নামের গরুটি ২০২২ সালে পাশের বদরগঞ্জ হাট থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকায় লুৎফর রহমান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছি। সেদিনই গরুটির নাম চৌধুরী রাখা হয়। বর্তমানে গরুটির দুই দাঁত উঠেছে।
এ চৌধুরী আমার কথা শুনে দাঁত দেখাতে বললে দাঁত দেখায়, বসতে বললে বসে উঠতে বললে উঠে। এ পর্যন্ত ক্রেতারা আট/নয় লাখ টাকা দাম বলেছেন হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির। আমি ১৫ লাখ টাকা হলে বিক্রি করব।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রমতে, এ জেলায় প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা হয়। এতে এই জেলার পশুর চাহিদা সারা দেশে। এখানকার লোকজন খামার ছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পারিবারিকভাবে পশু পালন করে থাকেন। তৃণমূলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে এই পশু পালনের মাধ্যমে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এবার কোরবানির ঈদের জন্য জেলায় বাণিজ্যিক ও পারিবারিক খামার রয়েছে ৩০ হাজার ৬৮৮টি। এসব খামারে গরু-ছাগল রয়েছে ২ লাখ ৯৮৯টি। অথচ এ বছর জেলায় গরুর চাহিদা ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩৭টি, যা চাহিদার চেয়ে ৭৮ হাজার ৩৫২টি গরু-ছাগল বেশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী বলেন, এবার পর্যাপ্ত কোরবানির পশু আছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা।
হাটে ব্যবসায়ী ও খামারিরা নির্বিঘ্নে তাদের পশু বিক্রি করতে গিয়ে কোনো হয়রানির স্বীকার না হয় এর জন্য পুলিশ ও প্রশাসন রয়েছে। এছাড়া পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পশু চিকিৎসক রয়েছেন।
মোনাক্কা আলী আরও বলেন, এবার অনলাইনে গরু-ছাগল বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিক্রির জন্য অর্ধ শতাধিক গরুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।