প্রিয় রাজশাহী ডেস্ক: আজ ৭ ডিসেম্বর। গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত দিবস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ। ১৯৭১ সালের এই দিনে কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসী ঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে। বর্তমান স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ ও তৎকালীন এসডিও মাঠ মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বিকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাদারগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর হয়ে গাইবান্ধায় প্রবেশ করে। তারা টিএন্ডটির ওয়্যারলেস দখল করে। পরবর্তীতে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে (বর্তমান শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) ঘাঁটি স্থাপন করে। এই ঘাঁটি থেকেই তারা শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন চালাতে থাকে। তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে অসংখ্য মানুষ ধরে এনে হত্যা করার পর মাটিতে পুঁতে রাখে। পুঁতে রাখা হয় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটের পাশেও অসংখ্য লাশ। তাই এই স্থানগুলো পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এরমধ্যে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। প্রতি রাতেই স্টেডিয়ামের পাশে একটি গোডাউনের প্রাচীর ঘেরা এলাকায় দালালদের সহায়তায় অসহায় মানুষদের ধরে এনে পাকিস্তানি সেনারা তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করত। বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের এখানে ধরে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পার্শ্ববর্তী রেললাইনের ধারেও গর্ত করে পুঁতে রাখা হয় শত শত লাশ।
গাইবান্ধা জেলা জাসদের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ শরিফুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধাতেও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তানি সেনাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধায় মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে আগের রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামের ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। এর আগে ৬ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বাহিনীর বিমান গাইবান্ধা রেলষ্টেশনের উত্তর পাশে বোমা ফেলে। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে সেদিন বিকেলে ট্যাংক নিয়ে মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরে। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ৭ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে শহরে প্রবেশ করে।
তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধার যুদ্ধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো-বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, হরিপুর অপারেশন, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইস গেট আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ, কালাসোনার চরের যুদ্ধ।
এদিকে ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া আয়োজন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।