প্রিয় রাজশাহী ডেস্ক: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া গাজা প্রস্তাব চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে পারবে না এবং এমনকি প্রস্তাবটি সেজন্য পাস করা হয়নি। এতে শুধু বলা হয়েছে, টেকসই যুদ্ধবিরতির জন্য যুতসই ‘পরিস্থিতি’ তৈরিতে ‘আশু পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি খোলাসা কোনো আহ্বান নয়, এসব কথার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল মনে করছে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে তারা যা যা করার করছে। মানবিক সাহায্য সামগ্রীর কী হবে তা-ও নানাকিছুর ওপর নির্ভর করছে। তবে জাতিসংঘ গাজায় সহযোগিতা কার্যক্রম জোরদার করতে একজন সমন্বয়কারী নিয়োগ করবে। আর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলসহ সব পক্ষ যেন প্রস্তাবের ‘দাবিগুলো’ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। কিন্তু ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড মোটেই ইতিবাচক নয়।
জাতিসংঘকে ইসরায়েল সাধারণত শত্রুজ্ঞান করে থাকে এবং সংস্থাটির কর্মকাণ্ডকে পক্ষপাতমূলক মনে করে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ইসরায়েল ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর ভিসা বাতিল করেছে।
জাতিসংঘের প্রস্তাবের কি আন্তর্জাতিক আইনগত কোনো ক্ষমতা আছে?
না, একদম নেই। জাতিসংঘের হাতেগোনা প্রস্তাব আইনি পরিসরে মূল্যায়িত হয়েছে। এসব প্রস্তাবের সঙ্গে সবসময় আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা একমত থাকেন না। তবে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের প্রয়োজনে পাস হওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে সামরিক ও বেসামরিক পদক্ষেপ নিতে পারবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবে পদক্ষেপের সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকতে হবে, শুধু আহ্বান জানালেই হবে না।
শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা নিয়ে পাস হওয়া ২৭২০ নম্বর প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তের উল্লেখ নেই। তবে কিছু আন্তর্জাতিক আইনজীবীর অভিমত হলো, জাতিসংঘ ঘোষণার সপ্তম অনুচ্ছেদের বাইরেও যেকোনো প্রস্তাবে ‘দাবি’ কথাটি থাকলে তা আইনি ভিত্তি পেতে পারে। কিন্তু ইসরায়েল তো জাতিসংঘের দুই ডজনের বেশি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যে অনেকগুলোতে পশ্চিমতীরে অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
তাহলে এই প্রস্তাবের ফায়দা কী
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনেক সময় বৈশ্বিক জনমতের ক্ষেত্রে একটি সংকেত হিসেবে কাজ করে। পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের একমত হওয়াটাও বেশ দুরুহ ব্যাপার। যদি কোনো ক্ষেত্রে ঐকমত্য মেলে, সেটি অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে গুরুত্ব বহন করে। ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে বৈপরীত্য হ্রাস প্রক্রিয়া হিসেবেও প্রস্তাবগুলোকে দেখা হয়। শুক্রবার যে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পক্ষে কিছুটা কাজের জায়গা তৈরির সুযোগ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও জাতিসংঘের প্রস্তাবকে ইসরায়েলের প্রতি সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেছে। সাধারণত ওয়াশিংটন ইসরায়েলের বিপক্ষে যায় এমন প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাস হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫ দেশের মধ্যে ১৩টি ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) প্রথম প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। এক সপ্তাহ ধরে ঝুলে থাকার পর প্রস্তাবটি পাস হলেও এর দ্বারা যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা নেই।