নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তর বলে দেওয়ার চুক্তি করেছিল রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) তিন পুলিশের নেতৃত্বে একটি চক্র। তাদের এই তৎপরতা গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষার আগের রাতে ধরা পড়ে। ওই তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করার পর তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার চেক, উত্তর বলে দেওয়ার ১৪টি গোপন ডিভাইস জব্দ করা হয়।
এই ঘটনায় রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় একটি মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরাসহ এই মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য হচ্ছেন সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রাব্বানী, কনস্টেবল আবদুর রহমান ও শাহরিয়ার পারভেজ শিমুল।
এদের মধ্যে আবদুর রহমান ও শাহরিয়ার পারভেজ রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। গোলাম রাব্বানী কর্মরত ছিলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানায়। তবে গোলাম রাব্বানী একসময় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে আরএমপিতে ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে পার্বতীপুরে এএসআই হন। শাহরিয়ারের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায়। আবদুর রহমানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গোলাম রাব্বানীর বাড়ি রংপুরের পীরগাছায়।
মামলার অপর দুই আসামি হচ্ছেন মেহেদী হাসান ও মখলেসুর রহমান। তাঁরা পলাতক। তাঁদের ঠিকানা ও বিস্তারিত জানা যায়নি।
পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে চুক্তি করা হয়েছিল। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল চেক এবং স্ট্যাম্প।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার আগে পুলিশের এই সদস্যরা ১৫ থেকে ২০ জন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়ার চুক্তি করেন। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রত্যেককে খুবই ছোট আকারের হেডফোন সরবরাহ করেন। এই হেডফোনের মাধ্যমে বাইরে থেকে পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নের সব উত্তর বলে দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে চুক্তি করা হয়েছিল। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল চেক এবং স্ট্যাম্প। পুলিশের অভিযানে কিছু স্ট্যাম্প, একটি ১০ লাখ টাকার চেক এবং ১৪টি গোপন ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরীক্ষার আগের রাতে এই পুলিশ সদস্যদের এমন তৎপরতার বিষয়ে জানতে পেরে প্রথমেই আরএমপি সদর দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর শাহরিয়ার পারভেজ ও আবদুর রহমানকে আটক করে আরএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের নগর ডিবি পুলিশের কার্যালয়েই রাখা হয়। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে শুক্রবার দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানা থেকে এএসআই গোলাম রাব্বানীকে আটক করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রতারণার চেষ্টার অভিযোগে কারিমা খাতুন নামের এক ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী শনিবার সন্ধ্যায় রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন পুলিশ সদস্যকে শনিবার সন্ধ্যার পর আদালতে পাঠানো হয়েছে।