বিশ্বজুড়ে তেলের বাজার স্থিতিশীল করতে উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। আগামী মাস থেকে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমিয়ে দেবে।
জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী ১৩ দেশীয় জোট ওপেক প্লাস ও এর ১০ মিত্র দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটি। মিত্র দেশগুলোর নেতৃত্বে ছিল রাশিয়া।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরবের এক ঘোষণায় বাড়তে শুরু করেছে তেলের দাম।
গত কয়েক বছরে দামের উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়তির দিকে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া বিশ্ববাজারে কম মূল্যের জ্বালানি তেল সরবরাহের কারণে দামে স্থিতাবস্থা আনতে পারছিল না ওপেক ও ওপেক প্লাস। ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো এর আগেও তেল উৎপাদন কমানোর জন্য দুই দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
অবশেষে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেক প্লাসের সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীদের দীর্ঘ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জোটগতভাবে দৈনিক ১৪ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানো হবে। এর মধ্যে সৌদি একাই কমিয়ে দেবে ১০ লাখ ব্যারেল।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, যে আলোচনার ভিত্তিতে সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিল, তাতে বোঝা যায়, অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একধরনের উত্তেজনা আছে। বিশেষ করে যেভাবে তাদের মধ্যে তেল উৎপাদন কোটার জটিল বিন্যাস হলো, তাতে এক কঠিন সমীকরণের আভাস পাওয়া গেল। এ কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম একধরনের ভারসাম্যের মধ্যে আছে।
রোববার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে যে বৈঠক হলো, তার আগে অনেক আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠককে ওপেকের ইতিহাসের অন্যতম ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ বৈঠক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
দেখা যাচ্ছে, সৌদি আরব এককভাবে তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিল। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেদের তেল উৎপাদনের কোটা বাড়িয়েছে, সে জন্য তারা অনেক দিন ধরে দেনদরবার করে আসছিল। আবার অন্য দেশগুলোর তেল উৎপাদনের কোটা কমেছে।
রোববার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে যে বন্দোবস্ত হলো, তা মূলত সৌদি আরবের নেতৃত্বে হয়েছে। সৌদি যুবরাজ আবদুল আজিজ বিন সালমান যাকে ‘সৌদি ললিপপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যার বদৌলতে তেল ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়বে। তবে সৌদি আরবের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা কেবল জুলাই মাসের জন্য, পরে তা বাড়তেও পারে।
বিশ্লেষকদের হিসাব, সৌদি আরবের বাজেট–ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে অপরিশোধিত তেলের দর প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের ওপরে রাখতে হবে।
যদিও গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব করে সৌদি আরব তেলের দাম বড়জোর এক থেকে ছয় ডলার বাড়তে পারে। কিন্তু তাতে ভোক্তাদের তেমন কিছু আসবে যাবে না, অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিনের দাম সে কারণে রাজনৈতিকভাবে হুমকিতে পড়বে না। কারণ, সে দেশের পাম্পগুলোতে তেলের দাম এমনিতেই গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।
রোববার সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আগামী জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকেই তারা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে গড়ে অন্তত ১০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উৎপাদন করবে। সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী আব্দুল আজিজ বিন সালমান এক সংবাদ সম্মেলনে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলেন, এটি আমাদের জন্য বিশাল এক প্রাপ্তির দিন।
কারণ আমরা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, তা নজিরবিহীন। জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমানোর এই সিদ্ধান্ত অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ।
এদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলছে, এর ফলে রাশিয়াই উপকৃত হবে। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানি বাণিজ্যের ওপর অবরোধ আরোপ করলেও তেলের দাম বাড়ায় এমনিতেই ওই অবরোধ খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না।
তার ওপর ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্ত রাশিয়াকে আরও বেশি সুবিধা করে দেবে। ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে।