প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শরীফুজ্জামান শরীফের বিরুদ্ধে হলফনামায় বাড়ি, কারা ভোগ এবং ব্যবসার তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ মে দুর্গাপুরে ভোট হয়। এতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদকে পরাজিত করে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় সাজা ভোগ ও সম্পদের বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেননি শরীফ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনায় বৈঠক করার অভিযোগে শরীফসহ ১২ জনকে অস্ত্র, গুলি ও সাড়ে ৩ লাখ টাকাসহ আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ১২ জনকেই পাঁচ দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। হলফনামায় ওই সাজা ভোগ উল্লেখ করেননি শরীফ।
এছাড়া ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই রাজশাহী শহরের বোয়ালিয়া থানার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রামচন্দ্রপুর মৌজার আরএস খতিয়ান নম্বর ৬২৪, হোল্ডিং নম্বর ৬৬২৫ এবং ৫৬১৬ নম্বর দলিলে শরীফ আরও ২৪ জনের সঙ্গে একটি জমি কেনেন। সেখানে নিজ নামে শূন্য দশমিক শূন্য ১০১২৫ একর জমির দাম দেখিয়েছেন ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে ওই জমিতে ‘বিসমিল্লাহ টাওয়ার’ নামের নির্মাণাধীন বাড়ির তথ্য হলফনামায় দেননি। দুর্গাপুরের সিংগা হাটে শরীফের মালিকানাধীন ‘আবু বাক্কার মাছের আড়তে’র তথ্যও উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া হলফনামায় লিজ নেওয়া পুকুর ১৪ বিঘা দেখানো হলেও তাঁর এমন শত বিঘা পুকুর রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হলফনামায় পেশা হিসেবে শিক্ষকতা ও মৎস্য ব্যবসার কথা বললেও এখান থেকে কোনো আয় দেখাননি শরীফ। তবে নির্দিষ্ট খাত উল্লেখ না করে অন্যান্য হিসাবে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে। নিজের নামে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ৩ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে আরও ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। নিজ নামে তিন বিঘা অকৃষি জমি এবং নির্ভরশীলের নামে চার কক্ষের সেমিপাকা বাড়ি দেখিয়েছেন একটি। কৃষি জমি না থাকলেও তা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন বছরে ৪৫ হাজার টাকা।
এদিকে ২০১৮ সালে দুর্গাপুরের কেশরপুর গ্রামের ইটভাটা মালিক ভোলানাথ ঘোষ শরীফের নামে ভাটা দখল ও চাঁদাবাজির মামলা করেন। হলফনামায় শরীফ মামলাটি নিষ্পত্তি দেখালেও এর স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র জমা দেননি।
উপজেলা নির্বাচনে শরীফের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল মজিদের অভিযোগ, গত ১৫ মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তথ্য গোপনের লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন ২৭টি ভোটকেন্দ্র দখল করেন শরীফ। ভোটের রাত থেকে তাঁর নেতাকর্মীর ওপর হামলা, দোকান ও বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, পাঁচ দিন সাজাভোগ করলেও বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে না বলে আমার আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছিলেন। মোবাইল কোর্টের রায় নাকি তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এ কারণে হলফনামায় উল্লেখ করিনি।
রাজশাহীতে নির্মাণাধীন বাড়ির বিষয়ে বলেন, ৩ বিঘা অকৃষি জমির মধ্যে ওই স্থান রয়েছে। আর বাড়িটি শুধু নির্মাণ করা হচ্ছে। মাছের আড়ত না দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পেশা মৎস্য ব্যবসা দিয়েছি- তার মানেই আড়ত আছে। আর লিজের পুকুর এখন ১৪ বিঘা আছে।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, আব্দুল মজিদের অভিযোগটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি। সূত্রঃ সমকাল