মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবির হলে ছাত্রলীগের তুলকালাম, প্রাধ্যক্ষকে হেনস্তা

প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ জার্সি না পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবাব আব্দুল লতিফ হলে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষকে হেনস্তা, ডাইনিং ও অতিথিকক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। আজ সোমবার বেলা ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হল গেটে তালা দিয়ে এ ভাঙচুর চালানো হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টরা আলোচনায় বসবেন। এরপর উপাচার্য স্যার সিদ্ধান্ত নেবেন।’

জানা গেছে, ২৮ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হবে। প্রতিযোগিতায় সুযোগ দিতে দুদিন আগ থেকে হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রাধ্যক্ষের কাছে খেলোয়াড়দের একটা তালিকা পাঠায়। তবে তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান হল প্রাধ্যক্ষ। এরপর গতকাল রোববার আবার শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে ছাত্রলীগের দুপক্ষের জন্য ১০টি করে মোট ২০টি জার্সি দাবি করেন। তবে হল প্রাধ্যক্ষ সেই দাবিও মেনে নেননি।

পরে আজ সোমবার দুপুরে খাবারের মধ্যে সিগারেটের খোসা পান ছাত্রলীগ কর্মী মনির হোসেন। এ ঘটনায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মুহূর্তে সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে যায় ছাত্রলীগের হাতে।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা হলের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে ভেতরে অবস্থান নেন। তারা হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষের নামফলক তুলে ফেলেন এবং তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। তারা হলের ডাইনিং কক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অতিথিকক্ষ ভাঙচুর করেন। ঘটনার একপর্যায়ে হল প্রাধ্যক্ষ সেখানে উপস্থিত হলে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা তাকে হেনস্তা করেন।

এসব ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান। তাদের মধ্যে ইমরান ও মাসুদুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী। অন্যদিকে তৌহিদুল ইসলাম সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এসব ঘটনা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি বছরের আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হবে মঙ্গলবার। সে জন্য দুদিন আগে ছাত্রলীগের কয়েকজন আমার কাছে একটা খেলোয়াড়ের তালিকা পাঠায় এবং সে অনুযায়ী খেলোয়াড় নিতে বলেন।

কিন্তু আমি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করি। এরপর গতকাল আবার তারা ছাত্রলীগের দুপক্ষের জন্য ২০টি জার্সি দাবি করেন। কিন্তু এই বিষয়ে উপাচার্যের নিষেধ থাকায় আমার পক্ষে এটা সম্ভব না। তাদের এসব দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা নেতা কর্মীদের নিয়ে আজকে এমন আন্দোলন করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের সময় উপস্থিত হলে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আমার সঙ্গে যে অসদাচরণ করেছেন। এটা একজন পিতা সমতুল্য মানুষের সঙ্গে করা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব না। বলতে গেলে তারা আমাকে হেনস্তা করেছেন। এ ঘটনার পর যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে সহযোগিতা না করে তাহলে আমার পক্ষে দায়িত্বে থাকা সম্ভব না।’

হল ডাইনিং পরিচালক শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘তরকারিতে সিগারেটের খোসাটি কোনো শিক্ষার্থীই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ফেলেছেন। রান্নার স্থানটি আমরা যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন রাখি। রান্না শেষে আমি নিজেই সেই খাবার যাচাই করি। তাই এমন ভুল হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’

অপরদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অ্যাথলেটিকস খেলার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। তিনি দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে স্বনামধন্য একটি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার করেছেন।’

ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন বলেন, ‘হলে কে বা কারা ভাঙচুর চালিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আমি সেই আন্দোলনে ছিলাম।’

ছাত্রলীগ নেতা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আজকের হলের আন্দোলনটি ছিল মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ভাঙচুরের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘আজকের আন্দোলনটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর হল প্রাধ্যক্ষের কাছে ছাত্রলীগের দাবির বিষয়টি আমি অবগত না।’ সূত্রঃ আজকের পত্রিকা

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.