মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোল্ডেন এইজ কেয়ারের মালিক শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে দুই মামলা

প্রবাস ডেস্কঃ বাংলাদেশে একটি তামাক কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন। নোয়াখালী ও বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলেই মূলত কাজ করতেন তিনি। এরপর এক সময় পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। কয়েক বছর আগেও ক্যানন্স স্ট্রিটে নকল ঘড়ি ও পারফিউমের ব্যবসা করতেন। বিক্রি করতেন টি-শার্ট। ফলে তিনি বারবার আটকও হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি রাতে ট্যাক্সি চালাতেন আর দিনে বাংলাদেশ প্লাজায় ইনস্যুরেন্সের দালালি করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সম্পদের মালিক বনে যান। গোল্ডেন এইজ কেয়ারের মালিক হন। এমনকি একটি পত্রিকারও সম্পাদক হন। এ যেন ঘরে ‘আলাদীনের চেরাগ’।

বলা হচ্ছিল শাহ নেওয়াজের কথা। তার বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ারের নামে মিথ্যা কাগজপত্র জমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে অনুদান নিয়ে সেই অর্থ হাতিয়ে আজ অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, করোনাভাইরাসের সময় যখন বিশ্ব বিপর্যস্ত। বিশেষ করে আমেরিকার অবস্থা ভয়াবহ, তখন দেশটির সরকার বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থাকে অর্থ সহায়তা দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান নেয়। কিন্তু সেই অনুদান থেকে গ্রাহকদের টাকা কম দিয়ে বাকি অর্থ হাতিয়ে নেন শাহ নেওয়াজ। আর তার এসব কর্মে সহযোগী হিসেবে মোহাম্মদ আলম নবী নামে এক ব্যক্তি আছেন বলে অভিযোগ। এই আলম নবীর আবার ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মামলায় ফেডারেল আদালতে অভিযুক্ত। ফলে তার পায়ে চিপ লাগানো আছে।

শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো- গোল্ডেন এইজ কেয়ারের ব্যবসায়িক পার্টনার পার্থের অংশের টাকা দেননি তিনি। আর সেই টাকা যাতে দিতে না হয়, সে জন্য পার্থের নামে মিথ্যা মামলা করেন শাহ নেওয়াজ। এরপর পার্থও তার দাবি আদায়ে মামলা করেন। সেই মামলায় জয় লাভ করেন তিনি। ফলে তাকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মতো ফেরত দিতে হবে শাহ নেওয়াজকে। কিন্তু এত ডলার কীভাবে দেবেন তিনি? তাহলে কী গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ার বন্ধ করে দিতে হবে? এমনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এখন।

এখানে বলে রাখা ভালো, গোল্ডেন এইজ কেয়ারের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে ট্যাক্স ও জালিয়াতির মামলা চলছে। এছাড়া আস্থাহীনতার কারণে বাংলাদেশ সোসাইটির সহ-সভাপতি পদে শাহ নেওয়াজের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে আর্টিস্ট নিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে।

শাহ নেওয়াজের স্ত্রী রানু নেওয়াজের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ৭-৮ বছর আগে ব্রুকলিনের মেলায় তার স্বামী শাহ নেওয়াজকে প্রকাশ্যে অপমানিত করেছিলেন রানু নেওয়াজ।

সম্প্রতি তিনি অন্য এক পুরুষের গায়েও হাত তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অনিক নামে এক ছেলের সঙ্গে রানু নেওয়াজের সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অথচ তিনি বিদেশে প্রচার করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। এরমধ্যে আবার ২৬ মে নিউইয়র্কে ডে প্যারেড হয় শাহ নেওয়াজের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এই প্যারেড বর্জন করে নিউইয়র্কে বাঙালিদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি। সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড ও চেয়ারম্যান নিয়ে শাহ নেওয়াজের বিরূপ মন্তব্য করায় প্যারেড বর্জন করা হয়।

অথচ এ ধরনের প্যারেডে নিউইয়র্কের সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন। এটা বাঙালিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। অথচ নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ বাঙালির বসবাস। সেই হিসেবে অন্তত ২০ হাজার মানুষের অংশ নেওয়ার কথা ছিল এই প্যারেডে। কিন্তু দেখা গেছে এর উল্টো। এই প্যারেডে ২০০ জন মানুষও অংশ নিয়েছেন কি না সন্দেহ।

তাই অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবারের প্যারেড নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

তারা আশা করছেন, এরপর যেন আর এমন বিভেদের প্যারেড না হয়। প্রবাসী বাঙালিরা যেন সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে এতে অংশ নিতে পারেন। পরস্পরে যেন ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন। আর তাই ভবিষ্যতে যেন এমন বিতর্কিত ব্যক্তির মাধ্যমে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না হয়, যাতে বর্জনের মতো ঘটনা ঘটে।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.