মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে লাখের নিচে মিলছে না কোরবানিযোগ্য গরু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পবিত্র ঈদুল আজহার আগে রাজশাহী নগরীর সিটি হাটে সাপ্তাহিক যে ‘বড় হাট’ বসে, সেটির প্রথম দিন ছিল রবিবার (২ জুন)। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রথম দিনেই হাটের কেনাবেচা জমজমাট করতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ইজারাদাররা। পশুও উঠেছিল প্রত্যাশা অনুযায়ী। তবে হতাশ হয়েছেন বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা হাটে না আসায়। কেননা পশু এলেও আসেনি ‘বড় ক্রেতারাই’। এতে হাতেগোনা কিছু বেচাবিক্রি নিয়েই শেষ হয়েছে প্রথম দিনের হাট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল ফটক ধরে প্রবেশদ্বারের দুই পাশের ১৫০-২০০ মিটার রাস্তায় গরু না থাকলেও মূল হাটে প্রচুর গরু রয়েছে। কড়া রোদে গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ব্যবসায়ী ও খামারি। কিন্তু ক্রেতার হাঁক-ডাক নেই তেমন। যে দুয়েকজন করে ক্রেতা আসছেন, তারাও লাভের মুখ তো দূরের কথা, যে খরচ হয়েছে সে দামও বলছেন না।

গরু ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের ভাষ্য, এ হাটের মূল ক্রেতাই হলো বাইরের বড় ক্রেতারা। যারা বড় বড় গাড়ি করে গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সব প্রস্তুতি থাকলেও বড় ব্যবসায়ীরা আসেননি। এ কারণে বেচাবিক্রি জমেনি। এবার গরুর দামও বেশি। এক লাখের নিচে কোরবানিযোগ্য গরু (যেটিকে ‘দাঁতা গরু’ বলে) এবার মিলবে না।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, বাইরের ব্যবসায়ীরা আসেনি। এ কারণে হাট জমেনি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল রবিবার থেকেই হাট জমে উঠবে। এখন দেখা যাক, সামনের দিনগুলো কেমন হয়।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগরপাড়া এলাকার মাসুদ রানা বলেন, আমরা সাত ভাগে একেকজন ১৫ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেছি। সময় সুযোগ বুঝে ঈদের কয়েকদিন আগে হাটে কিংবা খামারে গিয়ে একটি গরু কিনবো।

রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকার তারেক রহমান বলেন, এবারও গরু দাম চড়া। এরপরও তিন ভাগে একেকজন ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি। শহরে বাড়ি। তাই গরু রাখার সমস্যা। এ জন্য ঈদের দুই-তিন দিন আগে কিনে খামারে রেখে আসবো। আর ঈদের দিন ভোরের দিকে নিয়ে আসবো। রাজশাহীর গরু দেশের অন্য প্রান্তে চলে যাওয়ায় দাম বেশি হয়।

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এ বছর রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় প্রাণিসম্পদ দফতর।

এদিকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ৪০ মণের দুটি বিশাল আকৃতির গরু রয়েছে ইন্তাজ আলীর খামারে। উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের কৃষক ইন্তাজ আলীর গরু দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চার বছর ধরে লালন পালন করে আসছেন ‘শনি-রবি’ নামের গরু দুটি। এই গরু দুটি কিনলে বিক্রেতা ইন্তাজ আলী ক্রেতাকে দেবেন দুটি খাসি উপহার।

জানা গেছে, ফিজিয়ান জাতের গরু দুটির বয়সের পার্থক্য ১৫ দিনের। তাদের মধ্যে একটির জন্ম হয় শনিবারে অপটি রবিবারে। পুরো শরীর কালো রঙের সঙ্গে সাদা সাদা ডোরাকাটা।

ইন্তাজ আলী বলেন, জমির ঘাস, খৈল, বিভিন্ন ভুষিসহ খড় খাওয়ানো হয়। একেকটির ওজন প্রায় ২০ থেকে ২২ মণ করে। দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা। তবে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

গরু দেখতে আসা পাশের গ্রামের ভুট্টু মিয়া বলেন, বাগমারার সবচেয়ে বড় গরু এগুলো। বাড়িতে লালন-পালন করার কারণে এর মাংসও অনেক ভালো হবে। তাই আশপাশের এলাকার সবাই মুখে মুখে ইন্তাজ আলীর এই দুটি গরুর কথা। তারা দীর্ঘদিন থেকে অনেক যত্ন করে গরু দুটি লালন-পালন করে আসছেন।

গরুর মালিক ইন্তাজ আলী আরও বলেন, ঈদুল আজহায় যেহেতু অনেক বড় বড় গরু বিক্রি হয়ে থাকে সেজন্য ধারণা করছি, এই ঈদে আমার গরু দুটি বিক্রি হবে।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এ বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ তিন হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল রয়েছে তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি।

তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরের তুলনায় এবারও পশু চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। এবার উৎপাদন খরচ বেশি, দামও কিছুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.