নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রেলওয়ের ৫০ শতক জলাশয় ইজারা দেওয়া হয় মাছ চাষের জন্য। কিন্তু সেটি ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে গড়ে তোলা হবে বিপণিবিতান, কারখানাসহ নানা ধরনের দোকান। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশন-সংলগ্ন জায়গা নিয়ে চলছে এ কাণ্ড।
জলাশয়টি রেলের কাছ থেকে মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়েছিলেন বলে জানান স্থানীয় রফিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, সারাবছর পানি না থাকায় জলাশয়ে মাছ হয় না। এ জন্য বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য রেলের কাছে আবেদন করেছেন।
একইভাবে ধান চাষের জন্য লিজ নিয়েছেন স্টেশনের উত্তর পাশে সানাউল্লাহ, মিজানুর রহমান ও মুকুল ইসলাম নামে তিন প্রভাবশালী। এরই মধ্যে তারা ১০টি দোকানঘর নির্মাণ করছেন। প্রকাশ্যে এসব দোকানের নির্মাণকাজ চললেও তা বন্ধে রেলের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
মিজানুর রহমান বলেন, দপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ করে অনুমতির জন্য আবেদন করব। একই কথা বলেন সানাউল্লাহ। তাঁর ভাষ্য, অনেক আগেই ধান চাষের জন্য জমি লিজ নিয়েছেন। পরে আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ধানের আবাদ না হওয়ায় দোকান করে ভাড়া দিচ্ছেন তিনি।
বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদনের আগেই জলাশয় ভরাট করতে পারেন কিনা– এর সদুত্তর দিতে পারেননি দখলে জড়িত এই তিন প্রভাবশালী।
উপজেলায় সরদহ ও নন্দনগাছী নামে দুটি রেলস্টেশন আছে। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত রেলস্টেশন-সংলগ্ন ৬০০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ বিঘা জমি লিজ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ১৪ বছর ধরে নন্দনগাছী স্টেশন বন্ধ থাকার সুযোগে সংলগ্ন জলাশয় ছাড়াও পাশের জমিতে ৩৭৬টি স্থাপনা করা হয়েছে। সরদহ স্টেশনেও ৩২টি দোকানসহ স্থাপনা করা হয়েছে। দুই স্টেশনে রেলওয়ের অনুমোদন আছে মাত্র ৩৭টি দোকানের। অথচ প্রতিটি দোকানে ১৫০০-২৫০০ টাকা ভাড়া তুলছেন দখলদাররা। গড়ে ২০০০ টাকা ভাড়া হিসাবে প্রতি মাসে ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং বছরে কোটি টাকা ভাড়া তুলছে একটি চক্র।
সরেজমিন নন্দনগাছী স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মাছ চাষ দূরের কথা, জলাশয়ের অস্তিত্বই নেই। পুরো এলাকা ভরাট করা হয়েছে। দোকান-মার্কেটের জন্য প্লট আকারে বিক্রি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৮৫টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্লটের জন্য ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছেন বেকারি ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলীসহ কয়েকজন। ভরাট শেষ হলে বাকি টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, জলাশয়টি এভাবে ভরাট হলে বর্ষায় নন্দনগাছী বাজার এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। বাধা দিলেই হয়রানি করা হয়। পাকশী রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সেখানে কথা হয় নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজার ও স্টেশনের পানি যাওয়ার জায়গা নেই। প্রতিবছর বর্ষায় পরিষদ ভবন, স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষ বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। গত বছর কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বাজারের পানি রেলের জলাশয়ে প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। নিষেধ করলে শোনে না।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের সার্ভেয়ার শরিফুল ইসলাম বলেন, রেলের জলশয়টি মাছ চাষের জন্য দেওয়া হয়েছে। ভরাটের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরদহ স্টেশনমাস্টার ইকবাল কবির বলেন, রেলের জমি নানাভাবে প্রভাবশালীরা দখল করে আছে। আমরা বাধা দিলেও তারা শোনে না। এ ব্যাপারে রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ তদারকি করে। তাদেরকে আমরা বিষয়টা জানিয়েছি।
জানতে চাইলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, নন্দনগাছী ও সরদহ স্টেশনের জমির লিজ সংক্রান্ত বিষয় পাকশী শাখা থেকে দেখা হয়। অভিযোগ সেখানে জানানো হয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমে এসে পৌঁছায়নি। বিষয়টি যেহেতু জানলাম, লোক পাঠিয়ে দ্রুত দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।