নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বড়াল নদে প্রবল স্রোত ছিল। জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরতেন। বড় বড় নৌকা চলত। এখন তা অতীত। মৃতপ্রায় নদটির নাব্য ফিরিয়ে আনতে একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হলেও এর করুণ অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। এর মধ্যেই রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বড়ালের উৎসমুখের পলি অপসারণে খনন কাজ শুরু করেছে।
একে অর্থের অপচয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বড়ালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে একটি বড় প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। উৎসমুখেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এরপরও পলি অপসারণ করা হচ্ছে। যেভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে প্রতিবছর এটি করতে হবে। তাই এ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়; বলছেন নাটোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী।
একই কথা বলেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
তাঁর ভাষ্য, পুরো বড়াল নিয়ে কাজ না করে এ রকম খুচরা প্রকল্প নেওয়া মানেই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার পকেট ভারী করা। বড়ালের দুর্গতির শুরু ১৯৮১ সালে। ওই বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড নদের তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণ করে। এতে বন্ধ হয়ে যায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া হয় নদটিকে। দীর্ঘদিন পর বড়ালের নাব্য ফিরিয়ে আনতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে চারঘাটে রেগুলেটরের ইনটেক চ্যানেল খনন নামে ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। ৯ দশমিক ১ কিলোমিটার নদ খননে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খনন কাজ শেষ হয়। আরেকটি প্রকল্পে ১৫ দশমিক ২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের মূল্য বাবদ ৭৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ভূমি মালিকদের পরিশোধ করা হয়। তার পরও নদের তীরবর্তী এলাকা দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বড়াল পাড়ের আট উপজেলার মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৮ সালে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংক (আইডব্লিউএম) পানিসম্পদ পুনরুদ্ধারে সমীক্ষা প্রকল্প শুরু করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বড়ালের উৎসমুখ চারঘাট এলাকার স্লুইসগেট অপসারণ করে সেতু নির্মাণ এবং বেহাত হওয়া ১২০ কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করাসহ ২২০ কিলোমিটার খননের কথা বলা হয়।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া বড়ালের উৎসমুখ চারঘাট থেকে নাটোরের আটঘরিয়া পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার খননে ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায়। বড়াল নিয়ে চলমান এ কাজের মধ্যেই হঠাৎ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নদটির উৎসমুখের পলি অপসারণ করতে ৭০০ মিটার খনন কাজ শুরু করেছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে আমিন অ্যান্ড কোং। এর মধ্যে উৎসমুখে ৪৫০ মিটার ও চারঘাট স্লুইসগেটের পূর্ব পাশে ২৫০ মিটারজুড়ে পলি অপসারণ করা হবে। খননের আগে সীমানা নির্ধারণ কিংবা উৎসমুখ দখলমুক্ত করা হয়নি। খননের মাটি পাশের জমিতে রাখা হচ্ছে। ফলে এ প্রকল্পে শুধু অর্থের অপচয় হবে; বলছেন পরিবেশবাদীসহ সংশ্লিষ্টরা।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন-চারঘাটের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, আইডব্লিউএম সমীক্ষা করে নদ দখলমুক্ত করে খননের কথা বলছে। মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্প নিয়ে কাজও চলছে। সেটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব না দিয়ে উৎসমুখের পলি অপসারণ করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে ২ লাখ টাকা দিয়ে স্লুইসগেটের কচুরিপানা অপসারণ করে নদেই ফেলা হয়। এবারও পলি তুলে পাশেই ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আমিন অ্যান্ড কোংয়ের প্রতিনিধি মাহমুদ হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, সেভাবেই কাজ হচ্ছে।
রাজশাহী পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সারওয়ার-ই-জাহান বলেন, বর্ষাকালেও পদ্মা থেকে বড়ালে ঠিকমতো পানি প্রবেশ করছে না। এ কারণে উৎসমুখের পলি অপসারণ করা হচ্ছে। খননের মাটি নদের পাড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা হচ্ছে। খনন শেষে সেগুলোও অপসারণ করা হবে। এ প্রকল্প বিফলে যাবে না।