বুধবার | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁঃ গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা। যা আজ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের মাঠে এ খেলাটির আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বিভিন্ন বয়সি হাজারো নারী-পুরুষ এ খেলা উপভোগ করে।

তবে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম-বাংলার খেলা ফিরিয়ে আনার দাবী এলাকাবাসীর। সুস্থধারার গ্রামীন এসব খেলার মাধ্যমে ধর্মবর্ণ বিনিশেষে সম্প্রতির বন্ধন অটুট থাকবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের। মাঠের মাঝে পুতে রাখা হয়েছে আস্ত কলা গাছ। গাছের গোড়ায় মাটির ঘটিতে আমের পাতা ও পানি। আর পাশেই আরেকটি বাটিতে মন্ত্র পড়া দুধ-কলা। কলার গাছ থেকে নির্দিষ্ট দুরুত্বে খেলোয়ারদের খেলার জন্য চক্রাকারে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। যেনো অন্যরা প্রবেশ করতে না পারে। আর ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে খেলোয়াররা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রেখে শুরু হলো মন্ত্র পড়া।

এ খেলাটির নাম তন্ত্র-মন্ত্রে ‘পাতা খেলা’। খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক এবং পাতা বা সন্যাসি অন্তত ২০ জন অংশ নেয়। বাদ্যের তালে তালে সন্যাসিরা শারীরিক কসরত প্রদর্শণ করে। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে সন্যাসিরা কেউ লাফিয়ে কলা গাছে উঠার চেষ্টা করে। আবার কেউ বা সাপের মতো ফনা তুলে কলা গাছে আঘাত করছে। কেউ চক্রাকারের ভেতর থেকে মন্ত্রের টানে বেরিয়ে যায়। আবারও তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টার চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে সন্যাসিরা কলাগাছটি ভেঙে ফেলে। এভাবে শেষ হয় পাতা খেলা। আর মুগ্ধ হয়ে সন্যাসিদের মন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ করেন তান্ত্রিকরা।

তবে খেলা শুরুর আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। এতে খেলার মাঠে পানি জমে অন্য রকম এক আমেজ বিরাজ করছিল। আবহাওয়া অনেকটা শীতলতা বিরাজ করছিল। খেলোয়ার ও দর্শকরা খেলা দেখেও তৃপ্তি পেয়েছিল। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার এই পাতা খেলা দেখে উচ্ছসিত এলাকাবাসী। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বয়সিরা খেলা উপভোগ করেন।

খেলা দেখতে আসা গৃহবধু আফরোজ বেগম বলেন- এ খেলা দেখে অন্য রকম এক অনুভ‚তি পাওয়া যায়। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে পাতা বা সন্ন্যাসি যাদের বলে তাদের নাচ দেখা হয়। আবার কেউ কলা গাছে উঠার চেষ্টা করে পিছলে পড়ে যায়। আবার ওঝারা ঝাঁড় ফু করে।

খেলোয়ার আব্দুল আজিজ বলেন- মাঠের মাঝে কলা গাছ পুতে রাখা হয়। গাছের গোড়ায় ঘটিতে পানি ও বাটিতে দুধ কলা রাখা হয়। খেলায় যারা অংশ নিবে (পাতা/সন্ন্যাসী) তাদের মন্ত্র তারা মুগ্ধ করা হয়। এরপর তারা ঢোল বা বাদ্যের তালে তালে শারীরিক কসরত ও নাচ করে। আবার ওঝারা মন্ত্র পড়ে পাতাদের আকৃষ্ট করে কলা গাছের এলাকা থেকে দুরে নিয়ে যায়। আবারও পাতা ছুটে চলে আসে গাছের কাছে। এক সময় পাতার কলা গাছে উঠে ভেঙে ফেলে। এরপর খেলা শেষ হয়। আমরা বছরের পর বছর এসব খেলা করে আসছি এলাকাবাসীদের আনন্দ দেয়ার জন্য।

খেলার আয়োজক ও সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন- শত বছরের ঐতিহ্য পাতা খেলা। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে এলাকাবাসীদের আনন্দ দিতে এমন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া অন্য যেসব খেলা রয়েছে সেগুলো আগামীতে এমন ধারা অব্যহৃত থাকবে বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.