নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীতে বাড়ছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম চাষ। এসব আম পাঠানো হচ্ছে বিদেশে। বিশেষ করে ইউরোপে পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক আয়। লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসরণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে রাজশাহীর আম বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে ৯ দশমিক ৯ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। ওই বছর প্রায় ৮ লাখ টাকা লাভ করেছেন কৃষকেরা। ২০২৪ সালে আম রপ্তানি করার জন্য প্রায় ৩ হাজার ৪৯৭ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদন করা হয়েছে। গত বছর কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে চুক্তি করেছেন ৮০ জন চাষি। চলতি বছর এ চুক্তি করেছেন ১১৮ জন।
কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে মানদণ্ড হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন, নিরাপদ ও খাদ্যমান রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কৃষিকর্মীর স্বাস্থ্য ইত্যাদি মেনে চলা। স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদনের মধ্যে রয়েছে সার, সেচ, বালাইনাশক প্রয়োগ ও ব্যবহারবিধি অনুসরণ, বীজ ও চারা রোপণ সামগ্রীর ব্যবহার, রাসায়নিকের পরিমিত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা অবলম্বনে উৎপাদন নিশ্চিত করা। নিরাপদ ও খাদ্যমান রক্ষার মধ্যে রয়েছে ফসল সংগ্রহের পর সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা।
এবার রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম বাঘা উপজেলার কলিগ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান সাদি এন্টারপ্রাইজ থেকে ১ হাজার ৮০০ কেজি এবং বিদ্যুৎ হোসেন নামের এক চাষির বাগান থেকে ২০০ কেজি আম পাঠানো হয়েছে। কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এবার বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং চাহিদা বাড়ছে। এর মাধ্যমেই আম বিদেশে পাঠানো হয়। করণ এর মাধ্যমে জবাবদিহিতা আছে। এ কারণেই এর মাধ্যমে আম বিদেশে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমি যখন শুরু করি; তখন ৫০ বিঘা জমিতে আম চাষ করতাম। এখন ৩০০ বিঘায় চাষ করি। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। শুরুতে ১৪ থেকে ১৫ জন ছিল। এখন ২০-২৫ জন করছে। প্রতিটি ইউনিয়নেই হচ্ছে। তবে সব আম তো বিদেশে যায় না। বিশেষ করে খিরশাপাত, তোতপড়ি, ফজলি, আমরুপালি হয়। এসব জাতের চাহিদা বেশি। ফলে এগুলোর উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানি সবাই করতে চান না। ভয় পান। এর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হয়।’
শফিকুল বলেন, ‘আমাদের এখানে প্যাকিং হাউজ হচ্ছে। এটি হলে ঢাকায় আম নিয়ে প্যাকিং করতে হবে না। এ ছাড়া রাজশাহী বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ আসবে বলে শুনেছি। এগুলো হলে আমের রপ্তানি রমরমা হবে। তখন কৃষকেরা চাইবেন। তখন রাজশাহীর আম আমাদের খাওয়ার জন্য থাকবে না। সব বিদেশে চলে যাবে। এর পাশাপাশি আমের পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে। আগের চেয়ে কর্গো খরচ বেশি। আগে ২৪০ টাকা কেজি ছিল; এখন ৪০০ টাকা কেজি পড়ছে। ২০২৩ সালে বেশি হয়েছে। তবে ২০২৩ সালের চেয়ে এবারের রপ্তানি অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশি।’
রাজশাহী ফুড প্রডিউসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘রাজশাহীতে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বাড়ছে। বিদেশেও চাহিদা আছে। এবার উৎপাদন বেশি। কিন্তু সরকারে কাছে যে সার্পোটটা আমাদের দরকার; সেটি পাচ্ছি না। পাশের দেশের চেয়ে আমাদের দেশে কার্গো ভাড়া বেড়েছে অনেক। প্রতি বছরই কোনো না কোনো সমস্যা থাকে। আমরা লিখিতভাবেও বেশকিছু সমস্যা জানিয়েছি। কিছু সমাধান হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সমাধান হয়নি।’
বাঘা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে চাষ করা আম দেখেশুনে একটি প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছি। তারপর ঢাকার শ্যামপুর প্যাকিং হাউজ অ্যান্ড কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে আরেকটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়। এরপর এই আম বিদেশে চলে যাবে। এ লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছি। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও তদারকির কাজও করা হচ্ছে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং দিন দিন বাড়ছে। এর মাধ্যমে নিরাপদ আম উৎপাদন হচ্ছে। সব আম যে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। ২০২২ সালে সারাদেশের ১৭০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। গত বছর ৩৫০০ মেট্রিক টনের বেশি হয়েছে। আমাদের আম রপ্তানির প্রকল্প আছে। দেশে কিন্তু আম রপ্তানি বাড়ছে। শুধু বিদেশে নয়। দেশেও বিভিন্ন সুপার শপে চাহিদা আছে নিরাপদ আমের।’