প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ দেশে বর্তমানে ৬ লাখের বেশি মানুষ চোখের ছানি রোগে ভুগছে। এর সঙ্গে প্রতিবছর নতুন করে আরও দুই লাখের মতো রোগী যুক্ত হচ্ছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো এসব রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই গ্রামের। সেখানে রোগটি সম্পর্কে মানুষ খুব বেশি সচেতন নয়। কমিউনিটি ক্লিনিক ও ভিশন সেন্টারসহ স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসার পরিধি বাড়লেও অসচেতনতা ও অবহেলায় চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছেন বহু রোগী। এ অবস্থায় শতভাগ নিরাময়যোগ্য এই রোগ প্রতিরোধে সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ও রোগীর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্র্যাক্টিভ সার্জনস আয়োজিত ‘জুন: ক্যাটারাক্ট অ্যাওয়ারনেস মান্থ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন বলেন, এক সময় ছানি না পেকে যাওয়া পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করা হতো না। সেখান থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসার কারণে খুব সহজেই কম সময়ে এ অপারেশন করা যাচ্ছে। আমাদের কাছে যারা আসে তারা চিকিৎসার আওতায় আসলেও বহু রোগী ঘরে থাকছে, চিকিৎসা করাচ্ছে না। অথচ সময়মতো অস্ত্রোপচার হলে শতভাগ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, আঘাতজনিত কারণে শিশুরা এবং বয়স বেড়ে গেলে বয়স্কদের ছানি পড়ে। এজন্য সচেতনতার সীমা-পরিসীমা নেই। বাচ্চারা আঘাত পেলে রেটিনা ঠিক আছে কি না সেটি দেখতে হবে, না হলে দ্রুতই তার ছানি পড়বে। আমরা ছানি সম্পর্কে অবহেলা করি। এজন্য ছানি সমস্যা ও কীভাবে বেঁচে থাকা যায় সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে এ ব্যাপারে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় উপজেলা পর্যায়ে ভিশন সেন্টার স্থাপন হচ্ছে। পাশাপাশি সোসাইটির পক্ষ থেকে গ্রামাঞ্চলে ক্যাম্প করা হয়।
বিএসসিআরএসর সভাপতি অধ্যাপক ডা. অধ্যাপক ডা. আশরাফ সাঈদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চক্ষু চিকিৎসার দিকপাল এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাকাডেমি অব অপথালমোলজির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন।
ছানি সচেতনতা মাস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ছানি রোগের ৮০ ভাগ রোগীই গ্রামের। সেখানকার মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব অনেক বেশি। ছানি পরিণত হওয়ার আগে গুরুত্ব দেন না। বিশেষ করে অস্ত্রোপচার করতে রোগী ও পরিবারের সদস্যরা অবহেলা করেন। অথচ শুরুর দিকে ব্যবস্থা নিলে অনেকাংশে অপারেশন ছাড়াই এ রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিনামূল্যে চোখের ছানি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এ সময় বিএসসিআরএসর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. মাহবুব বলেন, গত কয়েক দশকে চোখের চিকিৎসা যতটা আধুনিক হয়েছে অন্যকোনো চিকিৎসায় হয়নি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সার্জারি হয় ছানি। তারপরও আমাদের সচেতনতার ব্যাপক ঘাটতি থেকে গেছে। এজন্য শুধু সরকার নয় বেসরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসলে ছানিজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
বিএসসিআরএসর মহাসচিব ডা. ইশতিয়াক আনোয়ার বলেন, চোখের ছানিজনিত অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেতে শুধু চিকিৎসকরা নয় গণমাধ্যমকেও বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। ছানি বেশিরভাগ হয়ে থাকে বয়স্ক ব্যক্তিদের। যখন তাদের আর নিজস্ব কর্মক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকেনা। এজন্য পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। গুরুতর আকার রূপ নেওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া গেলে মুক্তি সম্ভব।’
সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আশরাফ সাঈদ বলেন, আমাদের দেশে বাবা-মায়ের ছানি হলে সন্তানরা অপারেশন করতে চায় না, অবহেলা করেন। তাই, পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা জরুরি। এটি হলে অনেক বয়স্ক মানুষ নিজের ওপর নির্ভরশীল হতে পারবে। অস্ত্রোপচার করলেই যে ছানি ভালো হয়ে যাবে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ধারণা নেই। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়েও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সক্ষমতা রয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার হচ্ছে। শিক্ষিতদের মধ্যেও অসচেতনতা রয়েছে। অস্ত্রোপচার না করলে মানসিক স্বাস্থ্যে অনেক বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।