শুক্রবার | ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে লাখের নিচে মিলছে না কোরবানির গরু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়ার আনোয়ার, শামিম ও শরিফুল শেখসহ সাতজন প্রতিবছরে একসঙ্গে গরু কোরবানি দেন। আগের বছরগুলোতে তারা প্রত্যেকে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে ভাগে গরু কোরবানি দিয়েছেন। এ বছর টাকা লেগেছে ১৯ হাজার ৪০০। গরুর দাম পড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় বাড়তি টাকায় গরু কিনতে হয়েছে তাদের।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য কম। সবাই মিলে ভাগে পশু কোরবানি করি। আগে দেখা গেছে, ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে গরু হয়ে গেছে। এবার হাটে এই টাকায় যে গরু দেখেছি, তা চোখেই লাগেনি। বাছুর গরুর দামই ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় গরু কিনতে হয়েছে। শুধু কোরবানি দিলেই তো হবে না, পশু একটু হৃষ্টপুষ্ট হতে হবে তো।’

গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, খামারিদের কাছ থেকে তাদের বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। আর খামারিরা জানিয়েছেন, গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে গরু না বেচলে তাদের লোকসান হবে। কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে অনেকে গরু বিক্রি করছেন না বলেও জানিয়েছেন তারা।

পবা উপজেলার রণহাটি গ্রামের খামারি জাহিদ হাসান জানান, তার খামারে এবার ৪৫টি গরু আছে। কিছু ছাগল এবং গাড়লও আছে। এসব গবাদিপশুর খাবার কিনে খাওয়াতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে আরও বেশি গরু পালন করেছি। এবার খরচ খুব বেশি। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে খাবারের জন্য। ব্যয় বেশি হওয়ায় পশুর দাম একটু বেশি না হলে লোকসান গুণতে হবে। সব খামারিরই একই অবস্থা।’

উত্তরের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটিহাট। সপ্তাহের দুদিন এখানে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। বুধবার (১২ জুন) থেকে এখানে রোজই পশুরহাট বসবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পশু কিনে নিয়ে যাবেন। হাটটিতে এখন শুধু স্থানীয় লোকেরাই কোরবানির জন্য পশু কিনছেন।

হাটের ব্যবসায়ী জুলমত আলী বলেন, ‘গ্রামে ঘুরে লাখ টাকার নিচে কোরবানি দেওয়ার মতো কোন ‘দাঁতা’ গরুই পাওয়া যাচ্ছে না। গরুর মালিক এতো বেশি দাম চাচ্ছেন যে কখনো কখনো দামই বলা যাচ্ছে না। খামার থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে। বেশি দাম দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অল্প করে গরু কিনছি। হাটে এনে বিক্রি করতে আবার সমস্যা হচ্ছে। হাটে ঘুরে মানুষ খালি দাম শুনছেন। দাম বেশি বলে কিনছেন কম। আর কয়দিন পর হয়তো বিক্রি বাড়বে।’

রাজশাহী সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘হাটে এখন ভারতের কোন পশু আসে না। যা আসে সব স্থানীয় খামারের ও কৃষকের পালন করা পশু। এসব গরুর দাম এবার একটু বেশি। তাই বেচাবিক্রি কম। বাইরের ব্যবসায়ীরা এখনো আসেননি। এ কারণে হাট জমেনি। বুধবার থেকে হয়তো ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আসবেন। তারা ট্রাকভরে গরু নিয়ে যাবেন।’

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এবার প্রায় দেড় হাজার খামারে ও কৃষকের ঘরে কোরবানিযোগ্য পশু আছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। এর মধ্যে গরু আছে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ আছে ৩ হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল আছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১ লাখ পশু এবার উদ্বৃত্ত থাকবে। এগুলো দেশের নানাপ্রান্তে চলে যাবে।

দাম বেশি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, ‘এবার উৎপাদন খরচ বেশি। সে জন্য দামও কিছুটা বেশি। দাম বেশি হলেও আমরা চাই খামারি প্রকৃত মূল্যটা পাক। তাদের যেন লোকসান না হয়। তাহলে গবাদিপশু পালনে তারা উৎসাহী হবেন।’

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.