বৃহস্পতিবার | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কথা রাখলেন না রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল পরিবেশবাদীদের দেওয়া কথা রাখেননি। গাছ কেটেই তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার গাছ কাটা শুরুও হয়েছিল। দুপুরে খবর পেয়ে পরিবেশবাদীরা গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা পাঁচটি গাছের মধ্যে এক দিনেই তিনটি কেটে ফেলা হয়েছে। অন্য দুটির মধ্যে একটি কড়াইগাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার পর শেকড় কাটা শুরু হয়েছিল। এই গাছটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। পাকা জাম ধরে থাকা আরেকটি গাছ কাটতে গোড়া থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। পরিবেশবাদীদের বাধায় এ দুটি গাছ বেঁচে গেছে।

যে তিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, এর মধ্যে একটি কদম ও দুটি সেগুন। একটি সেগুনগাছের নিচের দিকের কোটরে পাখির বাসা ছিল। কয়েক দিন আগেও সেখানে চারটি ডিম দেখা গেছে। কাটার পর পড়ে থাকা গাছের এই বাসাটিতে আজ বৃহস্পতিবার ডিমগুলো দেখা যায়নি। কোটরের ভেতরে শুধু পাখির বাসার খড়কুটো দেখা গেছে। কেটে ফেলা তিনটি গাছ থেকে কয়েকটি পাখির বাসা পড়ে ছিল এখানে-ওখানে। তা দেখে হতাশা প্রকাশ করছিলেন পরিবেশবাদীরা।

নগরীর সোনাদিঘি এলাকায় নিজস্ব জায়গায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ। এ স্থানটিতে আগে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট। অনেক আগে থেকেই এখানে ২০-২২টি গাছ আছে। এর মধ্যে কয়েকটি শতবর্ষী। পরিবেশবাদীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকে স্বাগত জানালেও তাঁরা গাছ কাটার বিপক্ষে।

গাছগুলো কেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানতে পেরে বেশ কিছুদিন ধরেই এর প্রতিবাদ করে আসছিল রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ। ২২ মে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করেন। এরপর গত ২৫ মে সংগঠনের সদস্যরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালের সঙ্গেও দেখা করেন। গাছ না কাটার দাবিতে স্মারকলিপি দেন।

সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সেদিন চেয়ারম্যান গাছ রেখেই নকশা বদলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কথা তিনি রাখেননি।

তিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়তিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়।

গত ৬ জুন জেলা পরিষদ পাঁচটি বড় গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় গাছগুলো মেসার্স মেঘনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। ১১ জুন প্রতিষ্ঠানটিকে গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তাতে সাত দিনের মধ্যে গাছ কেটে নিতে বলা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাছের ক্রেতা নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন শ্রমিকদের নিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। দুপুরে খবর পান পরিবেশবাদীরা।

দুপুরে একটি হ্যান্ডমাইক নিয়ে সেখানে ছুটে যান সংগঠনের এক সদস্য। অন্য সদস্যরাও একে একে জড়ো হতে থাকেন। এর মধ্যেই রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব নাজমুল হোসেন রাজু ছুটে এসে গাছ কাটতে বারণ করেন। তিনি বলেন, গাছে কোপ দেওয়ার আগে তাঁর হাতে কোপ দিতে হবে। তাঁর এ কথা শোনার পর শ্রমিকেরা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।

নাজমুল হোসেন রাজু বলেন, ‘এই গাছগুলোর কোনো কোনোটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এসব গাছ ঘিরে। এগুলো কাটা হবে না বলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে কথা রাখলেন না। এটা দুঃখজনক। আমরা আর একটি গাছও কাটতে দেব না। কেউ গাছ কাটতে এলে আমরা রুখে দাঁড়াব।’

ছুটে এসেছিলেন পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থা বারসিকের গবেষক শহিদুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় বলা হয়, বড় গাছ কেটে ছোট গাছ বেশি করে লাগিয়ে দেওয়া হবে। এতে সমস্যার সমাধান হয় না। অনেক পাখি আছে বড় গাছ ছাড়া বাসা বাঁধে না। এরা যাবে কোথায়? একটা বড় গাছ যেভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে পারে, ছোট গাছ সেটা পারে না। তাই আমরা এখনো দাবি করছি, যে কয়টি বড় গাছ আগে সেগুলো যেন আর কাটা না হয়।’

তিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়। 

জেলা পরিষদ পাঁচটি গাছ বিক্রি করেছে মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায়। পরিবেশবাদীরা অভিযোগ তুলেছেন, গাছের মূল্য নির্ধারণেও আছে শুভংকরের ফাঁকি। পাঁচটি গাছের মধ্যে শতবর্ষী একটি কড়াই গাছের দামই ২ লাখ টাকা হবে। এত কম টাকায় এসব গাছ বিক্রির কেন এমন তোড়জোড়, তা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়। জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে গাছ দেখে মূল্য নির্ধারণ করেছে।’ গাছ কাটতে বাধা আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা জেলা পরিষদের ব্যাপার। আমরা গাছ কাটতে বলিনি। গাছ কাটবে না রাখবে, সেটা জেলা পরিষদ বুঝবে।’

প্রতিশ্রুতি ভেঙে গাছ কাটার বিষয়ে কথা বলতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালকে বিকেলে ফোন করা হয়। তাঁর সহধর্মিণী ফোন ধরে বলেন, চেয়ারম্যান ঘুমাচ্ছেন। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.