প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ গরমে কোরবানির পশুর চামড়া দ্রুত লবণ দিতে বলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পচনরোধে সাত ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দিতে হবে। নতুবা চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বছর প্রতি বর্গফুটে ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়িয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। চামড়ার দাম বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ট্যানারি মালিকদের থেকে বিগত বছরগুলোর বকেয়া টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্ধিহান রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবুও পশুর চামড়া কেনাকে কেন্দ্র করে ভালো প্রস্তুতির কথা জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়া গরম থাকার কারণে চামড়া দ্রুত লবণ দিতে হবে। এ কাজে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে। দেরি হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। একই সঙ্গে চামড়া কাটা ছেড়া থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পশুর চামড়ায় কাটা থাকলে ট্যানারি সেটা নিতে চায় না। অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ট্যানারিতে বিক্রি করা চামড়ার টাকা বকেয়া রয়েছে। তবে সর্বশেষ মঙ্গলবার পর্যন্ত টাকা পাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোরবানি আসতে কিছুদিন সময় থাকায় বকেয়া ফেরতের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর বাজারে লবণের সরবরাহ ভালো আছে। লবণের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, চামড়ার মূল ব্যবসায় হয় নাটোরে। নাটোরের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করা বকেয়া টাকা রয়েছে। তবে সঠিকভাবে টাকার পরিমাণ বলা সম্ভব হচ্ছে না। সময় মতো এই টাকাগুলো ফেরত পেলে ব্যবসয়ীরা আরও বেশি পশুর চামড়া কিনতে পারতেন। বকেয়া মাথায় নিয়ে এবারও কোরবানির চামড়া কিনবেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি পশুর চামড়া কেনাবেচা হয় বেলপুকুর ও বানেশ্বরে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কোরবানির পশুর চামড়া এখানে কেনাবেচা হয়ে থাকে। এছাড়া রাজশাহী নগরীর সপুরা, আমচত্বর, কাশিয়াডাঙ্গায় ক্ষুদ্রভাবে কেনাবেচা হয় পশুর চামড়া। তবে দিনশেষে সব চামড়া বেলপুকুর ও বানেশ্বরে নিয়ে লবণযুক্ত করা হয়।
পুঠিয়ার বেলপুকুর ও বানেশ্বর হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া কেনাকে কেন্দ্র করে আড়ৎগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ কিনে গোডাউনে রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ প্রয়োজন হয়। সেই জন্য তারা বরাবরের মতো লবণ কিনে রেখেছেন।
জানা গেছে, ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গতবারের চেয়ে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ায় ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে ও ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়িয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা। গতবারের তুলনায় খাসির কাঁচা চামড়ার দাম ২ থেকে ৫ টাকা বেশি এবং বকরির চামড়ার দাম ৬ টাকা বেশি ধরা হয়েছে। এবারের ঈদে খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নাটোর জেলায় লবণের সরবরাহকারী একতা ট্রেডার্সের মালিক দীলিপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে জেলায় চাহিদার তুলনায় কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের লবণের সরবরাহ বেশি আছে। ফলে কোনোরকম ঘাটতি হবে না। দামও বাড়বে না। এছাড়া বর্তমানে লবণের দাম নিম্নমুখী।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রুবেল বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ার দাম বেড়েছে। এটা ভালো খবর। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সব চামড়া না। দেখা যায় ৫০০ পিস চামড়ার মধ্যে মাত্র ২০০ পিস চামড়া এমন দামে বিক্রি হয়ে থাকে। বাকিগুলো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর বকেয়া ট্যানারি মালিকদের কাছে পাবে ব্যবসায়ীরা। এখন পর্যন্ত সেইভাবে টাকা পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে কিছু টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরেও চামড়া কেনাকে কেন্দ্র করে তাদের প্রস্তুতি ভালো বলে তিনি জানান।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, প্রস্তুতি ভালো আছে। তবে এবার কোরবানি গরমে হচ্ছে। এ কারণে চামড়া দ্রুত নষ্ট হয়। তাই ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দিতে হবে। তা না হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া ২০১৪-১৫ সালে ট্যানারি বকেয়া রয়েছে। আসলে টাকার পরিমাণ সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ট্যানারি মালিকরাও কিছু কিছু করে বকেয়া টাকা ফেরত দিয়েছেন।