নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল বাতিল ও সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার বেলা ১১ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহাল বাতিল, সব কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনা, একজন কোটা সুবিধা ভোগকারী সরকারি চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শুধু একবার কোটা সুবিধা নেওয়া এবং পৌষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিসহ বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন।
এ সময় তারা ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’, ’১৮-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক’- ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, ‘কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাওয়া আমাদের দাবি নয়। এদেশের স্বাধীনতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অতুলনীয়। তাই বলে সংখ্যালঘু সেই গোষ্ঠীর জন্য বৃহৎ পরিমান কোটা রাখার কোনো মানেই হয় না। একজন কোটা সুবিধা ভোগকারী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি পরীক্ষা পর্যন্ত কোটার সুবিধা নিয়ে থাকে। এমনকি কোটার সাহায্যে নিম্ন গ্রেডে চাকরি নিয়ে আবার উচ্চ গ্রেডে চাকরি নেওয়ার সুযোগও তারা লুফে নেয়।’
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এরকম বারবার কোটা সুবিধা ভোগ করার ফলে আমাদের মতো কোটাহীন শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রেই তাদের থেকে পিছিয়ে থাকে। তারা সংখ্যায় দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম এবং তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। যেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। রেলওয়েতে তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ শতাংশ। যেটা বলা যায় সম্পূর্ণ কোটার দখলেই।’
আমানুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। আমাদের দাবি, এই কোটা শতাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা হোক। সরকারি সকল পৌষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করা হোক। সেই সাথে কোটার সুবিধা ভোগকারীদের জীবনে যেকোনো ক্ষেত্রে একবার কোটার সুবিধা দেওয়া হোক।’
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, ‘কোটা হচ্ছে একটি বৈষম্যমূলক প্রথা। বতর্মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও কোটা পদ্ধতির মতো একটি বৈষম্যমূলক প্রথা চলতে পারে না। সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে যারা ইতোমধ্যে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে, তাদেরকে আরও বেশি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে।’
তার দাবি, ‘আগামী ৪ তারিখের রায়ে ২০১৮ সালের পরিপত্রকে পুনর্বহাল করা হোক। এছাড়া একটি কমিশন গঠন করে ৫৬ শতাংশ কোটা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা হোক। একজন শিক্ষার্থী তার জীবদ্দশায় একবারই কোটা ব্যবহার করতে পারবে, এমন নিয়ম করা হোক।’
পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে বলেছিলাম কোটা পদ্ধতি সংস্কার চাই। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কার হবে না, কোটা বাতিল করে দিলাম। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, এবার কোনো আশ্বাস না, আমরা এবার কোটা পদ্ধতির সংস্করণ চাই। রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিক তাতে আমাদের সমস্যা নেই, কিন্তু একটি রাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ কোটা দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ মহিবের সঞ্চালনায় এ সময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।