মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চলবে সপ্তাহে দুবার

প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ ঢাকা ও খুলনার পর এবার রাজশাহী মহানগর থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যে ইঞ্জিন ও ব্রডগেজ কোচ আছে, তা দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন একটি বা দুটি ট্রেন চালানো যাবে এই রুটে। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেগুলোর একটি ছিল রেল ট্রানজিট। এই স্মারকে রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়টিও রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, বাংলাদেশ-ভারত রেল ট্রানজিট চুক্তির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৭৭ বছর পর রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে পুনরায় ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এটি হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী চতুর্থ আন্তর্দেশীয় ট্রেন। বর্তমানে ঢাকা থেকে তিনটি ট্রেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রবেশ করে। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন চালু হয়।

এরপর দ্বিতীয় রুট হিসেবে ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে চালু হয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটে চালু হয় মিতালী এক্সপ্রেস। এবার রাজশাহী-কলকাতা রুটে ট্রেন চালুর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্রডগেজ কোচের সংকট আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা ছাড়া পুরোপুরি সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গত ২৪ জুন সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের যে ইঞ্জিন আছে, তা দিয়ে সপ্তাহে একটি-দুটি ট্রেন সপ্তাহের দুই দিন বা তিন দিন চলবে। এছাড়া রেলের ব্রডগেজ কোচের স্বল্পতা আছে। তাই এ বিষয়ে ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যদি তাদের ব্রডগেজ কোচ এনে সংযোজন করা যায়, তাহলে ব্রডগেজ কোচের সমাধান হবে।

আগরতলা-আখাউড়া সরাসরি ট্রানজিট হবে নাঃ দুই দেশের সমঝোতার মধ্যে আগরতলা থেকে কলকাতার মধ্যে রেল ট্রানজিটের কথাও বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুট বিবেচনা করা হয়েছে গেদে-দর্শনা-ঈশ্বরদী-টঙ্গী-ভৈরব বাজার-আখাউড়া-আগরতলা রুট। আবার ভারতের পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল-নাভারন-যশোর-রূপদিয়া-পদ্মবিলা-লোহাগড়া-কাশিয়ানী-শিবচর-মাওয়া-নিমতলা-গেন্ডারিয়া-ঢাকা-টঙ্গী-ভৈরব বাজার-আখাউড়া-আগরতলা রুট।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, বাংলাদেশ অংশের অনেক রেলপথ মিটারগেজ। সে ক্ষেত্রে ভারত চাইলেও সরাসরি ট্রানজিট নিতে পারবে না।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে তাদের পণ্য খালাস করতে হবে এবং মিটারগেজ কোচে পার হতে হবে। তবে ভারত বলছে, এই রুটে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা গেজ পরিবর্তন করতে চায় তারা।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, আগরতলা-আখাউড়া দিয়ে কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ট্রানজিট হবে না। কারণ, আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তো মিটারগেজ ট্র্যাক। বাংলাদেশ চিন্তা করেছে, পদ্মা ব্রিজ পার হওয়ার পরে নিমতলীতে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো বা আইসিডি করার কথা। সেখান থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট করে পণ্য কলকাতায় যাবে।

নেপাল-ভুটানে ট্রেন যাবে শুধু সীমান্ত পর্যন্তঃ ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের কথা বলা হলেও এই দুটি দেশে কোনো রেল যোগাযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে মূলত কীভাবে পণ্য পরিবহন হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে রেলওয়ে বলছে, মূলত ভারতের সীমান্ত ব্যবহার করে এই দুটি দেশে পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট ৮৬১ কিলোমিটার, নেপালে ২০২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জরিপ চালাবে তারা। আর ভুটানে ট্রেন নেওয়ার জন্য খুব শিগগির একটা কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির কাজ থাকবে, কীভাবে এই দেশ দুটির সঙ্গে ভারত হয়ে সংযোগ স্থাপন করা যায়।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নের সময় বলা হয়েছে, ভারতের ট্রেনটি গেদে স্টেশন থেকে দর্শনা, আব্দুলপুর, চিলাহাটি হয়ে হলদিবাড়ী, ডালগাঁও পর্যন্ত যাবে। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের আলিদুয়ারপুর জেলার হাসিমারা সীমান্ত পর্যন্ত রেল চালানোর অনুমতি মিলেছে। এতে বাংলাদেশের ট্রেন ভুটান সীমান্তের কাছাকাছি যেতে পারবে।

ভারতের সঙ্গে যে ১২টি রুটে আন্তর্দেশীয় রেল সংযোগ স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য বিরল-রাধিকাপুর এবং মোগলহাট-গীতালদহ রুটে নজর রাখছে রেলওয়ে। রেলপথসচিব বলেন, বিরল-রাধিকাপুর হয়ে ভারতের যোগবাণী পর্যন্ত রেল চলবে। সেখান থেকে নেপালের বিরাটনগর সীমান্ত কাছে। নেপালের পাথর এ রুটে আসছে বাংলাদেশে। এই পথে যদি পণ্যবাহী রেল পরিচালনা করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ আরও বেশি রাজস্ব আয় করবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতের বর্তমান রেলপথ ব্যবহার করতে পারবে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘দুই দেশের একটা কমিটি হবে। এখন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করা হবে। মাত্র তো চুক্তি হয়েছে। কারা কীভাবে অর্থ লগ্নি করবে, সেটি আসবে তারপর। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট—দুই ধরনের পলিসির কথাই চুক্তিতে আছে। এখন নেপাল, ভুটানে কীভাবে পণ্য যাবে, কীভাবে বাংলাদেশ লভ্যাংশ পাবে, সেটি নির্ধারণ করবে কমিটি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাভের চেয়ে ক্ষতির শঙ্কা বেশি। এর আগে নৌ করিডর নিয়ে চুক্তি হলেও বাংলাদেশ বেশি লাভবান হতে পারেনি। আবার রেলে যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ লাভ করলেও পণ্য পরিবহনে খুব বেশি লাভ করতে পারবে না।

রেলওয়ে বলছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রেলওয়ের আয় নির্ভর করে মূলত মালবাহী ট্রেনের আয়ের ওপর। একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের গড় আয় যেখানে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, সেখানে একটি মালবাহী ট্রেনের গড় আয় ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী প্রতিটি ট্রেনের অকুপেন্সি ১০০ থেকে ১২০ শতাংশ হলেও এখানে মালবাহী ট্রেন চলাচল করে মাত্র ২০-২৫টি এবং প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে সাড়ে তিন শতাধিক। সে ক্ষেত্রে রেল কীভাবে পণ্য পরিবহনে লাভ করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগের যে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়, তা আদতে একটি ‘ওপেন ডোর’ পলিসি। এ সম্পর্ক উন্নয়নের মূলকথা হলো, ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতাভিত্তিক উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া। কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে যাবে, এই নীতিতে আসলে উন্নয়ন স্থিতিশীল হয় না। সূত্রঃ আজকের পত্রিকা

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.