শনিবার | ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ কমিটিবিহীন ২১ মাস

প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ ২০২২ সালে এক বছরের জন্য গঠন করা হয়েছিল রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। নানা বিতর্কের প্রেক্ষিতে আট মাসেই সাবিকুল ইসলাম রানা ও জাকির হোসেন অমির সেই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর থেকে আর নতুন করে কমিটি দেওয়া হয়নি।

অর্থাৎ প্রায় দুই বছর ধরে কমিটি নেই রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের। এতে ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড। এমনকি পালনও করা হয় না সাংগঠনিক কর্মসূচি। হতাশায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মী থাকলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। এ অবস্থায় কর্মীদের মধ্যেও হতাশা নেমে এসেছে।

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০২২ সালে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাকিবুল ইসলাম রানাকে সভাপতি ও জকির হোসেন অমিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিন খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তবে এরপরই রানাকে নিয়ে উঠে বিতর্ক। ছাত্রদলের নেতা থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি বানানোকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর কিছুদিন না গড়াতেই মাদক ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন রানা।

অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক অমির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আট মাসের মাথায় এই কমিটি ভেঙে দেন। ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিন খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই নেতৃত্বশূন্য রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ।

২০২৩ সালে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণার জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেন। ২০২৩ সালের ১০ জুলাই তারা জীবনবৃত্তান্ত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর কর্মিসভার আয়োজন করে ছাত্রলীগ। পরে সেই কর্মিসভা আর হয়নি। তবে এ বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপত্যাশীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় অফিসে মতবিনিময় সভা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপরই কমিটি ঘোষণা হবে বলে মনে করছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে, এখনো রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। শুধু জেলা কমিটিই নয়, এখানকার উপজেলা কমিটিগুলোও নিষ্ক্রিয়। উপজেলা কমিটিও নেই অনেক দিন ধরে। রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, বাঘা, পুঠিয়া, বাগমারা উপজেলা কমিটি নেই প্রায় দুই বছর ধরে। এ ছাড়া অন্য তিনিটি উপজেলা চারঘাট, পবা, মোহনপুর উপজেলা কমিটি হয় আট বছর আগে। ফলে উপজেলা পর্যায়েও থমকে আছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।

এদিকে, দীর্ঘদিন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় অনেক সময়ই কর্মসূচি করতে অনীহা দেখা যায়। কয়েকজন নেতাকে মাঝেমধ্যে নিজের নেতৃত্বে কিছু কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। তবে, তাদের মধ্যেও নেমে এসেছে হতাশা। কোনো কোনো নেতা আবার বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। কেউ বা আবার যোগ দিয়েছেন চাকরিতে। এদিকে দুই বছরে নতুন করে কোনো কর্মী সংগ্রহ হয়নি। এমনকি পুরনোদেরও কেউ খবর না রাখায় তারা ছাত্রলীগ ছেড়ে অন্য অঙ্গসংগঠনের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হয়েছে জেলা ছাত্রলীগে।

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আমাদের সময়ের অনেক নেতার এখন বয়স নেই। সর্বশেষ কমিটির অনেকেরই এখন বয়স নেই। এই কমিটি দ্রুত দেওয়া দরকার। কারণ এখন কমিটি না থাকার কারণে অনেক সংকট হচ্ছে। কর্মী নেই।’

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় সংগঠনের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের কর্মী তৈরির কারখানা।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবু অনীল কুমার বলেন, ‘তারা যাতে দ্রুত এই কমিটি ঘোষণা করে সেজন্য কেন্দ্রে কথা বলেছি।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দ্রুতই এই কমিটি ঘোষণা করে দেব। কাজ চলছে।’ সূত্রঃ দেশ রুপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.