প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস তাদের কব্জায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। আজ শনিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাসের একটি সূত্র।
সূত্র জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনা বা শান্তি সংলাপ ফের শুরুর জন্য চুড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে হামাস। এই আলোচনার একটি অপরিহার্য অংশ গোষ্ঠীটির কব্জায় থাকা জিম্মিদের মুক্তি। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মাসে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হামাস।
গত ১ জুন গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি তিন স্তরবিশিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জো বাইডেন। তার প্রস্তাব অনুসারে, প্রথম স্তরে গাজায় ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। এই পর্বে রাফাসহ গাজার অন্যান্য জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি কয়েক শ’ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের কব্জায় থাকা কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবেন।
সেই সঙ্গে এ ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক। হামাস এবং ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা ও প্রতিরক্ষাবাহিনী এই পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে। যদি এই আলোচনা ৬ সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে শেষ না হয়, তাহলে পরিকল্পনার প্রথম পর্ব বা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়বে।
এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং তার বিনিময়ে গাজার বাসিন্দারা পাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।
পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
হামাসের সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবের প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার ১৬ দিন পর থেকে নিজেদের কব্জায় থাকা সব ইসরায়েলি সেনা ও পুরুষ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে গোষ্ঠীটি।
গত ৭ আগস্ট সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
অতর্কিত সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সেই অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই ফিলিস্তিনিদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
এই যুদ্ধের শুরু থেকে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার। গত মার্চ মাসে কাতারের মাধ্যমে ইসরায়েলের সরকারের কাছে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল হামাস। তবে তখন এই প্রস্তাবকে ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। তবে সম্প্রতি তিনি এই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে তিনি বলেছেন, শান্তি সংলাপ ফের শুরু করতে কাতারে শিগগিরই প্রতিনিধিদল পাঠাবেন তিনি।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতের মাত্রা বাড়তে থাকার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা আশা করছি, এবারের আলোচনা জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে আমরা একটি চুড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব।”