প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই, কিন্তু প্রথমার্ধ তো বটেই পুরো ম্যাচেই কোনো গোল করতে পারেনি ব্রাজিল ও উরুগুয়ে। অথচ ৭৪ মিনিটে মিডফিল্ডার নাহিতাস নান্দেজ লাল কার্ড দেখায় উরুগুইয়ানরা দশজনের দলে পরিণত হয়। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে ব্যর্থ দরিভাল জুনিয়রের ব্রাজিল। শেষপর্যন্ত গোলশূন্য ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে এডার মিলিটাও এবং ডগলাস লুইসের দুটি ব্যর্থ শটে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ব্রাজিলের, বিপরীতে সেমিফাইনালে উঠেছে উরুগুয়ে।
মূলত টাইব্রেকারের স্নায়ুচাপ সামলাতে পারেনি ব্রাজিল। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই নিজেদের ছন্দ খুঁজে ফেরা দলটি লাস ভেগাসের অ্যালিগায়েন্ট স্টেডিয়ামেও ভিন্ন কিছু করতে পারেনি। দরিভাল জুনিয়র অল্প সময়ে দলটিকে গুছিয়ে তোলার আভাস দিলেও, ফিনিশিং ও মাঝমাঠে তাদের দুর্বলতা টের পাওয়া গেছে হাড়ে হাড়ে। যার সমাপ্তি ঘটিয়ে টাইব্রেকারে উরুগুয়ে জিতেছে ৪-২ গোলে।
পুরো ম্যাচে কেমন উত্তেজনা ছিল সেটি টাইব্রেকার শুরুর আগমুহূর্তে চোখ রাখলেও টের পাওয়া যায়। কারণ দরিভাল-বিয়েলসার শিষ্যরা তখনও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়েছে। এরপর পেনাল্টি শ্যুট আউটে উরুগুয়ের শুরুটা গোল দিয়ে করেন ফ্রেডরিকো ভালবার্দে। অন্যদিকে, ব্রাজিলের প্রথম শট নিতে এসেই ব্যর্থ অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মিলিটাও। উরুগুয়ের গোলরক্ষক রচেট সেই শট ফিরিয়ে ব্রাজিলের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেন।
পরে অবশ্য ব্রাজিলের হয়ে সফল শট নিয়েছেন আন্দ্রেস পেরেইরা এবং গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি। এ ছাড়া অ্যালিসন বেকার উরুগুইয়ান গিমিনেজের শট ঠেকিয়ে ব্রাজিলকে কিছুটা আশা দিয়েছিলেন। কিন্তু বল গোলবারে মেরে সেই সম্ভাবনার অনেকাংশই ডুবিয়ে দেন ডগলাস লুইস। পরে বিয়েলসার শিষ্যদের মধ্য থেকে বেন্টেকার, আরাকাস্টার পর ম্যানুয়াল উগার্তে গোল করে সেলেসাওদের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকেন। ম্যাচ জয়ের উল্লাসে মাতে উরুগুয়ে, আর আবারও স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ডগলাস-মিলিটাওরা।
হলুদ কার্ডের কারণে ম্যাচটি নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি সেলেসাও ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তার অনুপস্থিতি লেফট উইংয়ে আজকে বেশ ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে। রদ্রিগো গোয়েস বড় কোনো সুযোগ তো তৈরি করতে পারেনইনি, উল্টো সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। যদিও প্রথমার্ধের গোলশূন্য অবস্থা কাটাতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণে ওঠে মার্সেলো বিয়েলসার উরুগুয়ে। এর ভেতর নুনিয়েজ-ফ্রেডরিক ভালভার্দেরা বেশ কয়েকটি শট নিয়েই গোলবারের অনেক ওপর দিয়ে মেরে বসেন। ব্রাজিল সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না।
৭৪ মিনিটে রদ্রিগোকে কড়া ট্যাকল করে প্রথমে হলুদ কার্ড দেখেন উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার নাহিতাস নান্দেজ। পরে ভিএআর দেখে রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখান। ফলে অনেকটা সময় বাকি থাকতেই ১০ জনের দলের পরিণত হয় উরুগুয়ে। তবুও সুযোগ তৈরি করেও, ঠিক গোলের কাছাকাছিও যেতে পারছিল না ব্রাজিল। পরে কোচ দরিভাল জুনিয়র তিনজনকে বদলি নামান। তুলে নেন রাফিনহা-পাকেতা ও গোমেজকে। পরিবর্তে স্যাভিও, আন্দ্রেস পেরেইরা ও ডগলাস লুইজ নামায় সেলেসাওদের খেলায় গতি বাড়ে।
অন্যদিকে, সেভাবে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় ৭৮ মিনিটে তুলে নেওয়ার উরুগুয়ে তারকা ডারউইন নুনিয়েজকেও। তবে ১০ জন নিয়ে আক্রমণ সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল বল পজেশনে এগিয়েও থাকলেও, বড় সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। ডি-বক্স পর্যন্ত গিয়েই বল হারাচ্ছিলেন রদ্রিগো, এন্ড্রিকরা। ৮৫ মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে শট নেন এন্ড্রিক, অতটা জোর না থাকায় উরুগুয়ে গোলরক্ষক সহজেই সেটি নিয়ন্ত্রণে নেন।
পরে ব্রাজিল রদ্রিগো, ব্রুনো গুইমারেসকে তুলে মার্টিনেল্লি ও এভানিলসনকে নামায়। তবে কোনো কিছুতেই কাঙ্ক্ষিত গোলটি আসছিল না। ফলে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতা থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ব্রাজিল-উরুগুয়ে কেউই স্বাচ্ছন্দ্য নয়, তবে আজ উরুগুয়েই শেষ হাসি হাসলো চরম চাপ সফলভাবে মোকাবিলা করে।