দিলীপ কুমার সরকারঃ ৮ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হলো ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। আইনগতভাবে রাজনৈতিক দলভিত্তিকভাবে হওয়ার কথা থাকলেও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনেকাংশেই নির্দলীয় অবয়ব পেয়েছে। কেননা ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রায় সবাই এ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
প্রার্থীদের দলীয় পরিচিতি খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ১৮৮৯ জন প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং গণতন্ত্রী পার্টির মাত্র ১৮ জন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অধিকাংশ উপজেলাতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ।
এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের প্রবল কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও অনেক ধরনের নির্বাচনি অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তফশিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ, বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তারের ঘটনা যেমন ঘটেছে; তেমনই ভোটের দিনে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ভোটারদের মধ্যে অর্থ বিতরণ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়া, বাইরে থেকে সিল মেরে এনে ব্যালট বাক্সে ভরানো, পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া, প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া বা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, প্রার্থী কর্তৃক অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগও উঠেছে এ নির্বাচন ঘিরে।
উল্লেখ্য, কিছু কিছু ঘটনায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সতর্কীকরণ, জরিমানা করা, প্রার্থিতা বাতিল করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া ইত্যাদিও দেখেছি আমরা। পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত বা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা, তাৎক্ষণিক কারাদণ্ড প্রদান করা, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে অনিয়মে জড়িত হওয়া কর্মকর্তাদের নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া, কোনো কোনো কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতা একেবারেই কম হয়নি। ছোটখাটো সংঘাত প্রায় প্রতিটি পর্বেই ঘটেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের দ্বন্দ্বে নির্বাচনি সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে ৭ জনের এবং আহত হয়েছে সহস্রাধিক। ৮ মে থেকে শুরু করে ৬ জুন পর্যন্ত প্রাণহানির ঘটনাগুলো ঘটেছে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচিতে, গোপালগঞ্জ সদরে, কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে, নরসিংদী জেলার রায়পুরায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও যশোর সদর জেলায়। প্রাণহানির সব ঘটনাতেই মামলা হয়েছে, অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন, কেউ কেউ পলাতক রয়েছেন এবং কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনও পেয়েছেন।
এ নির্বাচনের অন্যান্য নেতিবাচক অনুষঙ্গের মধ্যে অন্যতম ছিল মন্ত্রী ও এমপিদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনসহ অন্ধ অনুগতদের অংশগ্রহণ এবং মন্ত্রী ও এমপি কর্তৃক তাদের বিজয়ী করার চেষ্টা করা; প্রভাবশালীদের চাপ ও কৌশলের কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি আবার ফিরে আসা; বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন; চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানতের টাকা যথাক্রমে দশ ও পাঁচ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এক লাখ ও পঁচাত্তর হাজার টাকা করা ইত্যাদি। পাশাপাশি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ৮৯.১৫ শতাংশ (৪১৯টি) উপজেলাতেই বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে আশার কথা এই যে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হলেও ১০ জন নারী এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
এবারের উপজেলা নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রবিমুখতা। সব ধাপ মিলিয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬.৪৫ শতাংশ। ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখতার মূল কারণ নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থাহীনতা। এ আস্থাহীনতার কারণেই বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলও এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আর যে নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন এবং ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ থাকেন, তাকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে এবং নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর যদি মানুষের আস্থা ফিরে না আসে, তবে আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কেননা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মালিক বা জনগণ প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্র বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে না। তারা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্র বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে। আর জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়াই হচ্ছে নির্বাচন। রাষ্ট্রের মালিক বা ভোটাররা অনেক বিশ্বাসযোগ্য বিকল্পের মধ্য থেকে স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি বাছাই করে। এ বাছাই প্রক্রিয়া বা নির্বাচন যদি সঠিক হয়, তখন বলা যায়, রাষ্ট্রের মালিক বা জনগণ তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্র বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছে। আর বাছাই প্রক্রিয়া বা নির্বাচন যদি সঠিক না হয়, তবে সেকথা বলার সুযোগ থাকে না। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর এর বিভিন্নমুখী সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমে আসা যাক আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে। প্রথমত, ব্যতিক্রম বাদ দিলে এ নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এতে একই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে। এতে একদিকে যেমন দলীয় শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্টকর হবে, পাশাপাশি অন্তর্দলীয় কোন্দল ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে; যার আলামত ইতোমধ্যেই লক্ষ করা যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, এ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, ৮৯.১৫ শতাংশ উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অধিকাংশ উপজেলায় দলটির একাধিক প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ায় ফলাফল এমনটিই হওয়ার কথা। এ ফলাফলের কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মতো উপজেলাগুলোতেও একচ্ছত্র আধিপত্য ক্ষমতাসীনদের থাকবে।
তৃতীয়ত, অধিকাংশ উপজেলায় সংসদ-সদস্যদের আত্মীয়-স্বজন ও অনুগতরা বিজয়ী হওয়ায় সংসদ-সদস্য ও বিজয়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে পারে সংসদ-সদস্যদের হাতে। এখন আসা যাক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রসঙ্গে। প্রথমত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বর্জন করায় দলটির পক্ষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। স্বাভাবিকভাবেই দলটি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ক্রমাগতভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণে ভোটারদের সঙ্গে, বিশেষ করে নতুন ভোটারদের দলটির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটি নির্বাচনে আগ্রহী অনেক নেতাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী নেতা-কর্মীদের দল থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হলেও অধিকাংশ প্রার্থীই তা উপেক্ষা করেছেন। পরে দলে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রশ্নে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করায় তৃণমূল পর্যায়ে দলটি দুর্বল হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
তৃতীয়ত, একের পর এক নির্বাচন বর্জন করলেও দলটি সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। এতে দলটির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে, অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। চতুর্থত, গণআন্দোলন গড়ে তোলায় ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে যেভাবে দলের এবং সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের কমিটির ভাঙাগড়া চলছে, তাতে দলটি গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু নির্বাচন ব্যবস্থাই নয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপজেলা পরিষদ অনেক সমস্যায় জর্জরিত। আমরা জানি, আমাদের সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে কার্যকর ও স্বশাসিত স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পরিচালনাসহ জনসেবা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কর আরোপ ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার আইনগুলো প্রণীত হয়নি এবং শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উপজেলা পরিষদের অবস্থা আরও নাজুক। প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত অর্থে জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে না। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বৈত শাসন চলছে এবং পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলোকে উপজেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার কথা ছিল, তা অদ্যাবধি কার্যকর হয়নি। শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্তৃত্বই নয়, সংসদ-সদস্যদের সংবিধানবহির্ভূত হস্তক্ষেপও প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্যকর করে রেখেছে।
পরিশেষে নির্বাচনিব্যবস্থার ওপর আস্থা ফেরানো এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে কিছু সুপারিশ তুলে ধরছি। কেননা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নির্বাচনব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণের যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য ‘বটম-আপ’ অ্যাপ্রোচে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বকে উপেক্ষা করারও কোনো সুযোগ নেই।
সুপারিশগুলো হলো- ১. বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণ এবং স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ও সমঝোতা। আর এ সমঝোতার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সংলাপ;
২. নির্বাচনিব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে;
৩. আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে;
৪. আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা মনে করে, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ’;
৫. সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলো সংশোধন করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতিতে করতে হবে;
৬. উপজেলা পরিষদকে দ্বৈতশাসনমুক্ত করতে হবে এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে ন্যস্ত করতে হবে;
৭. সংসদ-সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে তাদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে হবে;
৮. উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানতের টাকা আগের মতো ১০ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করতে হবে;
৯. জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজন করতে হবে;
১০. সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একীভূত আইন (আমব্রেলা অ্যাক্ট) করতে হবে এবং ব্যয় সংকোচনসহ অনেক ধরনের জটিলতা পরিহারের জন্য একই সঙ্গে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে।
লেখকঃ কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক