প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ চারজনেরই পরিচয় ফেসবুকে। তাঁদের দেশ ভিন্ন। ভাষাও আলাদা। বড় হয়েছেন আলাদা সংস্কৃতিতে। এমন অনেক অমিল থাকা সত্ত্বেও এক হয়েছেন ভালোবাসার টানে। প্রথমে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। তারপর প্রেম। এরপর কাঁটাতারের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার তানোরে এসেছেন ফিলিপাইনের দুই তরুণী। এরই মধ্যে তাঁরা বিয়ে করেছেন তাঁদের ভালোবাসার মানুষকে।
এই দুই দম্পতি হলেন বাংলাদেশের রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম (২২) ও ফিলিপাইনের জাম্বোয়াঙ্গা উপদ্বীপ অঞ্চলের খাদিজা ইসলাম (২২)।
অন্যজন তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের মালশিরা গ্রামের রেজাউল করিম (৩৩) ও ফিলিপাইনের নেগ্রোস দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত বাগো শহরের মরিয়ম খাতুন (৩২)। মূলত এই দুই তরুণ প্রেমিকের বাসা তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রামে।
স্থানীয় এবং ওই দুই তরুণের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ফেসবুকে তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় ফিলিপাইনের জাম্বোয়াঙ্গা উপদ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দা খাদিজা ইসলামের। খাদিজা তখন সৌদি আরবে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। ধর্ম পরিবর্তনের আগে তাঁর পূর্ব নাম ছিল রিজেল ক্লিয়ার। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব গড়ায় ভালোবাসার সম্পর্কে। চলতি বছরের গত ৫ অক্টোবর সৌদি থেকে বাংলাদেশে আসেন খাদিজা ইসলাম। ঢাকায় বিমানবন্দরে তাঁকে রিসিভ করেন রাকিবুল। পরদিন ৬ অক্টোবর মুসলিম রীতিতে বিয়ে করেন তাঁরা। বর্তমানে তাঁরা নিজ বাড়িতেই বসবাস করছেন। ভিনদেশি পুত্রবধূ পেয়ে খুশি রাকিবুলের পরিবার।
এদিকে, প্রেমের টানে তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের মালশিরা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিমের কাছে ছুটে এসেছেন ফিলিপাইনের নেগ্রোস দ্বীপের পশ্চিম অংশ বাগো শহরের প্রেমিকা মরিয়ম খাতুন। মরিয়ম খাতুনের ধর্ম পরিবর্তনের আগে তাঁর পূর্ব নাম ছিল চারিনা মলিন। প্রেমিক রেজাউল ও ভিনদেশি প্রেমিকা মরিয়ম খাতুন সিঙ্গাপুরে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কাজের সুবাদে রেজাউল সিঙ্গাপুরে থাকায় মরিয়মের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। প্রায় তিন মাস আগে ভিনদেশি ওই প্রেমিকা মরিয়ম বাংলাদেশে এসে তানোর উপজেলার কাঁমারগা ইউনিয়নের মালশিরা গ্রামের প্রেমিক রেজাউলকে মুসলিম রীতিতে বিয়ে করে তাঁর বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি।
রাকিবুলের সঙ্গে খাদিজার পরিচয় এবং রেজাউলের সঙ্গে মরিয়মের পরিচয় কীভাবে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে পরিচয়। আমরা মোবাইলে ইংরেজি ভাষা ট্রান্সলেট করে মেসেজ আদান প্রদান করতাম। এভাবে চেনা-পরিচয়, বন্ধুত্ব। তারপর ধীরে ধীরে ভালো লাগা, আমাদের প্রেমের সম্পর্ক।’ পৃথক-পৃথকভাবে চারজনই তাঁদের পরিবারের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করেন। চার পরিবারই সম্মতি দেয়। কিন্তু বাধা ছিল দূরত্ব।
প্রায় তিন মাস আগে প্রথমে মরিয়ম এবং দুই দিন আগে খাদিজা বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশি প্রেমিকদের সঙ্গে বিয়ের পর বর্তমানে স্বামীর সংসারে থাকছেন তাঁরা। ভিন্ন পরিবেশে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছেন ভিনদেশি প্রেমিকারাও।
বিদেশি হলেও পুত্রবধূকে পেয়ে খুবই খুশি রাকিবুলের বাবা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অসংখ্য মানুষ তাঁদের দেখতে আসছেন। এটা দেখে ভালো লাগছে।’
ভিনদেশি নববধূ খাদিজা ও মরিয়ম বলেন, ‘সবার কাছে দোয়া চাই, আমরা যেন সুখী হতে পারি।’
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এবং তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ভিনদেশি ওই দুই তরুণীর যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।