বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশে গত ২৩ জুন ঘটা করে দলের ৭৫ বছরপূর্তি পালন করেছিল আওয়ামী লীগ। সেদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ অথচ মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি পাল্টে গেছে।
গত ৫ই অগাস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাইতো নেতা কর্মীরা বলছেন, না পারছি দেশ ছাড়তে না পারছি রাজনীতি করতে। অথচ নেত্রী কোন দিক-নির্দেশনা ছাড়াই আমাদের এতিম করে চলে গেলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগপন্থি নেতা-কর্মী রাতারাতি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি কর্মী বনে গেছেন ফেসবুকের বদৌলতে। সম্প্রতি এমনই একজন ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া গেছে যার নাম গোলাম সারওয়ার।
গোলাম সারওয়ারের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাবেক মেয়র কন্যা ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্না, রাজশাহী-০৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদসহ বিভিন্ন আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা ছবি রাতারাতি হাইড করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠানো শুরু করেছেন।
কিন্তু গোলাম সারওয়ারের ফেসবুক আইডি অনলাইন স্পাইওয়ার সফটওয়্যারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায়, গোলাম সারওয়ার প্রায় তিন শতাধিক ছবি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সরিয়ে ফেলেছেন। সেই সাথে ফেসবুকের পার্সোনাল বায়োডাটার তথ্য ডিলিট করে দিয়েছেন।
শুধু তাই নয় গোলাম সারওয়ারের ফেসবুকের ওয়াল ফটোতে গিয়ে দেখা যায় সেটিও ডিলিট করা হয়েছে এবং ফেসবুক ওয়াল ফটোতে আওয়ামী লীগের নেতার সাথে যেই ছবি ছিল তা ডিলিট করা হয়েছে।
গোলাম সারওয়ারের ফেসবুক আইডি যে কেউ পর্যবেক্ষণ করলেই এই তথ্যগুলো নিশ্চিত হতে পারবেন পাঠকরা।
এখন জানা যাক কে এই গোলাম সারওয়ার?
রাজশাহী কোর্ট এলাকার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের পেছনে বাড়ি গোলাম সারওয়ারের। কোন নির্দিষ্ট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা নেই গোলাম সারওয়ারের। কিন্তু তারপরও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন গোলাম সারওয়ার।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-০৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন গোলাম সারোয়ার। সেই সাথে পালন করেছেন ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব।
পবা-মোহনপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, গোলাম সারোয়ার ভাই আসাদুজ্জামান আসাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ব্যক্তি। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদকে মাইক্রোবাস দিয়ে, কার দিয়ে এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অথচ এখন গোলাম সারোয়ার বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের ভালো-মন্দ থেকে শুরু করে সব কিছুর সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন গোলাম সারোয়ার। আসাদের জোরেই রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় কিনেছেন কোটি টাকার জমি শুধুমাত্র লক্ষ টাকায়।
এদিকে সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের রাজশাহী মহানগরীর দাসপুকুর এলাকার জয় বাংলা পরিষদে গিয়ে জানা যায়, জয় বাংলা পরিষদ উন্নয়নে অপরিসীম অবদান ছিল গোলাম সারোয়ারের।
রাজশাহী মহানগরীর দাসপুকুর এলাকার স্থানীয় পান দোকানদার একরাম জানায়, আসাদের সাথে থাকতেন সবসময় সারোয়ার ভাই। জয় বাংলা পরিষদের কখন কি লাগবে তার সবকিছু দেখাশোনা করতেন গোলাম সারোয়ার।
অন্যদিকে অত্র এলাকার মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ জানান, সাবেক এমপি আসাদের নির্বাচনী প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে নেতাকর্মীদের দেখাশোনা করতেন গোলাম সারওয়ার। কিন্তু এখন শুনছি রাতে রাতে দিনে বিএনপি নেতাদের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়িয়েছেন। আগে ফেসবুকে ভিডিও ছবিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রায় স্ট্যাটাস দিতেন কিন্তু এখন আর ফেসবুকে সেটা দেখতে পাই না।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একটি রাজনৈতিক সূত্র জানায়, রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ডাবলুকেও ২০২৪ সালে উপজেলা নির্বাচনের সময় গাড়ি উপহার দিয়েছেন গোলাম সারওয়ার।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিভিন্ন মানুষকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি জমি কেনা বেচার কাজে জড়িত ছিলেন গোলাম সারোয়ার।
গোলাম সারোয়ার এর কাছে প্রতারিত হওয়া রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুরের ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, তিনি আমাকে জমি কিনে নাম করে ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আজ অবধি টাকা ফেরত দেন নাই। এমনকি টাকা চাইতে গেলে আমাকে উল্টো ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে। তবে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে গোলাম সারওয়ারের এই টাকার উৎস কোথায়, এটা কি কালো টাকা নাকি উনি বিশেষ কোন ব্যাক্তির কালী টাকা সংরক্ষণ করছেন?
অন্যদিকে রাজশাহীর সুশীল সমাজের দাবি, দুদকের মাধ্যমে এখনই যদি এ ধরনের ব্যাক্তির যথাযথ তদন্ত না করা হয়ে তবে এরাই ভবিষ্যতে রাঘব বোয়াল হয়ে উঠবে কিংবা ২য় সালমান এফ রহমান তৈরি হবে। তবে অনুসন্ধানের স্বার্থে ও সার্বিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য গোলাম সার্ভার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন সুইচড অফ পাওয়া যায়। বিধায় গোলাম সারওয়ার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের দলে যোগদানের বিষয়ে রাজশাহী জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ফয়সাল সরকার ডিকো বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনের কোন নেতাকর্মীদের বিএনপিতে ঠাঁই নেই। বিধায় কেউ যদি রাতারাতি খোলস পাল্টিয়ে নিজেকে বিএনপি কর্মী বলে দাবি করে তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই দলের শীর্ষ নেতা ও অভিভাবকেরা অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে’।