রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী সংখ্যা ত্রিশ হাজারের অধিক। কিন্তু এর কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার আসন সংখ্যা মাত্র ৮৪টি। এছাড়া ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ে জায়াগ কম হওয়া, রাতে খাবার না পাওয়া, মাছ-মাংসের পিস ছোট, ডাল পাতলা, ভাত শক্ত, মেয়েদের নির্দিষ্ট কোনো বসার স্থান থাকাসহ নানা অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বহুদিন ধরে সংস্কারের দাবি থাকলেও প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি তেমন কোনো ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাবিতে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। রাজশাহী অঞ্চলে টিউশনসহ কোনো ধরনের উপার্জনের সুযোগ যেন কুঁড়িয়ে পাওয়া হীরার মতো। তাই কম খরচে খাওয়ার জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভিড় জমায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ও হলগুলোর ডাইনিংয়ে। এরমধ্যে ক্যাফেটেরিয়ায় একসাথে বসার জন্য সিট রয়েছে মাত্র ৮৪টি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন দুপুরে প্রতি আসনের পিছনেই লেগে থাকে শিক্ষার্থীদের ভীড়। একজন শিক্ষার্থী খাবার শেষ করে কখন উঠবে, সেজন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। তার পিছনেও ভীড় জমায় অন্য কোনো ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ করা হয়ে যায় যুদ্ধসম ব্যাপার। এতোসবের মধ্যেও কিছু নারী শিক্ষার্থী খেতে যায় ক্যাফেটেরিয়ায়।
ক্যাম্পাসে যেই নারী শিক্ষার্থীরা পর্দা মেনে চলাফেরা করে, তাদের জন্য ক্যাফেটেরিয়ায় খেতে যাওয়া আরও বিব্রতকর। তারা চাইলেও সেখানে তাদের জন্য নেই কোনো বিশেষ সুবিধা। ফলে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাওয়া থেকে।
এই বিষয়ে কথা হয় আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম পারভেজের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন দিন ক্যাফেটেরিয়াতে খাবারের মান কমছে। মাছের যেই পিসগুলো দেওয়া হয়, এই রকম ৬-৭ টা পিস একটি স্টান্ডার্ড পিসের সমান হবে। সেইম মাংসের পিসের ক্ষেত্রেও। তবে রেগুলার মিল থেকে বড় পিসের মিল আছে। কিন্তু সেগুলোর দাম বেশি। আমাদের জন্য খাওয়া কঠিন হয়ে যায়। যতটুকু জানি ক্যাফেটেরিয়াতে একটা ফান্ড আছে। সেখানে যদি প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু ভর্তুকি দিতো, তাহলে খাবারের মান উন্নত করা সহজ হতো।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান কবির বলেন, আমরা দুপুরে খুব কষ্ট করে খাবার খাই। কারণ অনেক মানুষের ভীড় হয়। আর রাতে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। রাতে খাবারের ব্যবস্থা করলে আমরা এখানে খেতে পারতাম। একটা সময় ছিলো হলে খেতাম। কিন্তু হলে ক্যাটারিং সিস্টেম তৈরি করার জন্য এখন আর হলে খেত পারি না। কারণ আমাদের এখনো হলে সিট দেওয়া হয়নি। আর খাবারে মান খুবই বাজে। ইচ্ছে না হলেও পেটের দায়ে খেতে হয়।
নাইমা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাফেটেরিয়াতে খাবার খাওয়া হয়তোবা আমাদের জন্য না। কারণ, আমরা যারা পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করি, আমাদের কাছে ক্যাফেটেরিয়া একটা মৃত্যুপুরি। আমরা চাইলেও সব ছেলের সামনে খেতে পারি না। শুধু ক্যাফেটেরিয়া না পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই চিত্র দেখতে পাই। ক্যাফেটেরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি নারীদের জন্য আলাদা কিছুটা জায়গা করে দিতো, তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো।
এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও নিরুপায় হওয়ার কথা জানান ক্যাফেটেরিার প্রশাসক অধ্যাপক ড. আওরঙ্গজীব মো. আব্দুর রহমান। তবে, শিক্ষার্থীদের ভালো সেবা দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় একটা ফান্ড রয়েছে। ফান্ডের টাকাগুলো আসে মাঝেমধ্যে ক্যাফেটেরিয়া ভাড়ায় দেওয়া ও খাবারের বিশেষ অর্ডার থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখানে কোনো টাকা দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাফেটেরিয়ার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের ৮৫ শতাংশ দিয়ে থাকেন। বাকি ১৫ শতাংশ ক্যাফেটেরিয়ার ফান্ড থেকে দিতে হয়। মোট ২১ জন কর্মচারী রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যেই খাবার খাচ্ছে, সেখান থেকে আমরা লাভ করি না। সেখানে অনেক গরীব শিক্ষার্থীরা খেয়ে থাকে। এটা একটা সেবা হিসেবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
ফান্ড থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তুকি দেওয়া হয় কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী ৩০ টাকা দিয়ে খাচ্ছে। আদৌও কি ৩০ টাকা দিয়ে খাওয়া সম্ভব? আমাদের ঐ ফান্ড থেকেই ভর্তুকি দিতে হয়। বর্তমান বাজারে উর্ধগতির কারণে আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভালো খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা সবাই আমাদের সন্তানের মত। আমার সন্তান খারাপ খাবার গ্রহণ করুক, তা আমরাও কখনোই চাই না।
এ বিষয়ে রাবি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, রাবি ক্যাফেটেরিয়ার যে পরিসর, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যায় না। আমরা তা উন্নত করার চেষ্টা করছি। আর বাজারের উর্ধ্বগতির কারণে বর্তমানে খাবারের মান ভালো করা একটু কঠিন হচ্ছে। তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।