মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরিচ্যুতিকে বেআইনি দাবি করে বহাল করার দাবি ডা. রাজুর

 

রাবি প্রতিনিধি: এক শিক্ষিকার মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ৩ জুন চাকরিচ্যুত হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক রাজু আহমেদ। এই বরখাস্তকে বেআইনি দাবি করে তাঁকে চাকরিতে পুনরায় বহাল করার দাবি করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. রাজু আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর রাবির সহযোগী অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন তাঁর মেয়ের দাঁতের চিকিৎসার জন্য আমানা ক্লিনিকে আমার চেম্বারে আসেন। আমার এ্যাসিসটেন্ট তাঁর কাছে ফিস চাইলে তিনি তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত দূর্ব্যবহার করেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে তিনি আমার সাথেও দূর্ব্যবহার করেন এবং একপর্যায়ে আমার দিকে মারতে তেড়ে আসেন এবং টেবিলে রাখা ভারী পেপারওয়েট দিয়ে আমার মাথায় পরপর দু’বার সজোরে আঘাত করেন।

আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তিনি চিৎকার দিয়ে তাঁর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকজন দুর্বৃত্তকে উক্ত ঘরে প্রবেশ করতে বলেন এবং আমাকে মারতে বলেন। তখন দুর্বৃত্তরা আমার বুকে সজোরে লাথি মারে ও পা দিয়ে আমাকে খুচতে থাকে এবং আমার চেম্বার ভেঙ্গে তছনছ করে। অনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষতি করে।

তিনি বলেন, সাবিনা ইয়াসমিন তখন আমাকে মেরে ফেলতে দুর্বৃত্তদের হুকুম দেন। একজন দুর্বৃত্ত আমার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে উদ্যত হলে আমার এ্যাসিসটেন্টের আর্তচিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে উক্ত হামলাকারিদের নিকট থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদেরকে আটক করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর প্রফেসর আসাবুল হক ও কয়েকজন সহকারী প্রক্টর এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব বিস্তার করে উক্ত শিক্ষক মোসা. সাবিনা ইয়াসমিন ও তার সহযোগী হামলাকারিদের জোর করে নিয়ে চলে যায়। এরপর আমি রামেক হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গমন করি।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাবিনা ইয়াসমিন পরের দিন নিজেকে রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বর্ণনায় তার মেয়েকে জড়িয়ে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করবার জন্য মানববন্ধন করেন। ৩১ অক্টোবর বোয়ালিয়া থানায় বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যা আদালতে বিচারাধীন এবং মাননীয় আদালতের নির্দেশে আমি স্থায়ী জামিনে আছি। আমি শারিরীকভাবে কিছুটা সুস্থবোধ করায় ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে নিজে বাদী হয়ে সাবিনা ইয়াসমিনসহ তিনজনকে আসামি করে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করি। সেটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশের কোনো থানায় ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ নাই।

নিজের চাকরিচ্যুতিকে অন্যায় দাবি করে তিনি বলেন, সাবিনা ইয়াসমিন সম্পূর্ণ বাইরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে টেনে ষড়যন্ত্র মূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এবং উক্ত মামলাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট ভুলভাবে উপস্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত মামলার কারনে কোনো কারন দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর আমাকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন এবং একপর্যায়ে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে আমাকে চাকুরীচ্যুত করেন। চাকুরীচ্যুতির কারনে আমি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশান দায়ের করি। উক্ত রিট মামলায় হাইকোর্ট আমার চাকুরীচ্যুতির উক্ত আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন। আমি কোনো অন্যায় না করে, ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে আজকে চাকুরীহারা হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছি। উক্ত কারনে আমি সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্নের স্বীকার হচ্ছি।

চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি করে তিনি আরও বলেন, সাবিনা ইয়াসমিন একজন ফৌজদারী মামলার আসামী হয়েও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে চাকুরীতে বহাল রয়েছেন। আমার নামে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ এনে আমার নামে মিথ্যা মামলা এবং আমাকে চাকরিহারা করার জন্য সাবিনা ইয়াসমিন এর উপযুক্ত বিচারের জোর দাবী জানাচ্ছি এবং আমাকে চাকুরীতে পূর্নবহালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ড. সাবিনা ইয়াসমি বলেন, আমি ডা: রাজু আহমেদের নামে মামলা করার ১৩দিন পর তিনিও আমার নামে মামলা করেছেন। আমাকে হয়রানি করার জন্যই মূলত তিনি মামলা করেছেন। এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ জমা দিলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সত্যতা পেয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.