রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী-নওগাঁয় নামছে তাপমাত্রার পারদ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ায় নামছে শীত। নামছে তাপমাত্রার পারদও। এতে বাড়ছে ঠান্ডা অনুভূতি। পাল্লা দিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে জনজীবনেও।রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। আর পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁয় রেকর্ড হয়েছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

রাজশাহী ও নওগাঁ আবহওয়া অফিসের তথ্যমতে, রোববার ভোরে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া রাজশাহীতে এদিন সকাল ৬ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগের দিন শনিবার সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেল সিয়াস এবং সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলাগুলোর সদরে সকাল বেলা মানুষের চলাচল কম থাকছে। ভোরে শ্রমজীবী মানুষরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

নওগাঁ শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা মান্নাফ রাহী বলেন, ভোরে কাজে বের হতে গিয়ে দেখি কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এত ঠান্ডায় কাজ করা অনেক কষ্টকর। কুয়াশা এত বেশি যে, রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়েও গাড়ি চলছে ধীরগতিতে।

তাজের মোড়ে বাসচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কুয়াশার কারণে গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সকাল সাড়ে ৭টার দিকেও সূর্যের দেখা নেই। দিনমজুর মানুষজনের জন্য শীতটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের ফতেপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় সরিষার ফুল খুব ভালো ফুটেছে। তবে যদি বেশি দিন কুয়াশা থাকে, তাহলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। ছত্রাক আর পোকামাকড়ের আক্রমণের ভয় আছে।

কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের আলুর জমিতে সকালে কুয়াশার পানি জমে পাতা পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই প্রতিদিন ভোরে গিয়ে খেতে কাজ করতে হয়। তবে এত ঠান্ডায় কাজ করা অনেক কষ্টের।

বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পথশিশু মিনহাজ জানায়, রাতে শীত এত বেশি লাগে যে ঘুমাতে পারি না। আমাদের কাছে গরম কাপড় নেই। কোনো দিন খাবার পাই, কোনো দিন পাই না। শীত আরও বেশি কষ্ট বাড়িয়েছে।

রিকশাচালক জাকির হোসেন বলেন, শীতের কারণে খুব সকালে কাজ শুরু করতে পারি না। যাত্রীও কম। এতে আয়ও কমে গেছে।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিন শীষ বলেন, এ বছর সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। হঠাৎই শীতের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তবে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। বরাদ্দ পেলেই শীতার্ত মানুষের জন্য বস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আরও কয়েক দিন এমন শীত থাকতে পারে। বিশেষত রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে এবং কুয়াশা আরও ঘন হতে পারে।

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আজ রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন। গতকাল শনিবার এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি এবং শুক্রবার ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরও বলেন, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। নওগাঁ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনে সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬০ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বৃদ্ধরাও এই শীতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

নওগাঁ সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত চিকিৎসক আশিস কুমার বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.