সারাদেশের মধ্যে আলোচিত রাজশাহী মহানগরী যে শিক্ষা নগরী সেই সুনাম অক্ষুন্ন রাখলেন রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩-এ সারাদেশে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। একই সাথে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান (কারিগরি) নির্বাচিত হয়ে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখলেন রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক।
কারিগরি শিক্ষায় বিরল এই অর্জনে শিক্ষা নগরী রাজশাহী আবারও সারাদেশের মধ্যে আলোচিত শিক্ষ নগরী হিসেবে সুনাম অক্ষুন্ন রাখলো। রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট উত্তরবঙ্গের একমাত্র মহিলা পলিটেকনিক হিসেবে কারিগরি শিক্ষা ও নারী শিক্ষার প্রচার প্রসার ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। পরিচ্ছন্ন ও মনোরম পরিবেশ, যুগোপযোগী শিক্ষাদান পদ্ধতি, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরী, সুপরিশর ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, মেন্টরিং ও মনিটরিং এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমকে উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছে।
রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া বাইপাসে সড়কে অবস্থিত রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। মোট ২ একর জায়গার উপর ৫টি ভবন রয়েছ। যার মধ্যে প্রশাসনিক, একাডেমিক, লাইব্রেরী, আই.টি সেন্টার, অডিও-ভিজুয়াল ল্যাব, শিক্ষার্থীদের কমন রুম, ওয়ার্কসপ-১, ওয়ার্কসপ-২ ও ১৫০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নির্মানশৈলী ও স্থাপত্যশিল্প আধুনিকতার দিক থেকে দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপত্য।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও পেশাদার ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তির বিবেচনায় ২০০৩ সালে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আই.ডি.বি) এর আর্থিক সহায়তায় বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু হয়ে ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করা হয়। প্রথম বছরে (২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ হতে) ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ১৫৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
এসময় প্রথম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৎকালীন অধ্যক্ষ একেএম আমির হোসেন সরকার। পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটটির অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক। মূলত এসময় থেকে রাজশাহীতে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে নীরব বিল্পব শুরু হয়। মোঃ ওমর ফারুক কারিগরি শিক্ষাকে জনবান্ধব ও আধুনিকায়নে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে সিঙ্গাপুর সফর করেন।
এসময় তিনি সিঙ্গাপুরের কারিগরি শিক্ষার মান পর্যবেক্ষন করে দেশের কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে দেশে ফিরে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন। এর ধারাবাহিকতায় অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুকের নেতৃত্বে রাজশাহী সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ২০১৫ সালে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রবর্তিত সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সমুহের মধ্যে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সারা দেশের মধ্যে ২য় স্থান অধিকার অর্জন করে। আর সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩-এ সারাদেশে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
এর আগে বিভাগ ও জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান (কারিগরি) নির্বাচিত হয় রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। একই সাথে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩-এ রাজশাহী বিভাগ ও জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান (কারিগরি) প্রধান নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক। ইনস্টিটিউটে যোগদানের পর থেকেই রাজশাহী সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরিচালনা ও উন্নয়নে অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক কতিপয় কার্যক্রম হাতে নেন।
যার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন, উন্নত অনুশীলন প্রদর্শন, দলগত উদ্যোগ উৎসাহিতকরণ, উন্নততর সেবা প্রদান, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, নাগরিকের অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও ভূমিকা বৃদ্ধিকরণ, স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রতিভার উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন, এবং নারী উন্নয়নে অবদান। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ও চাহিদার নিরিখে আন্তর্জাতিক মানের প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারণ করে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত করে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক।
এজন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ রাজশাহীর সমাজ ও রাজনীতি সচেতন বিশিষ্টমহল ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় আন্তরিকতা ও সহযোগীতা কামনা করেন। উল্লেখ্য আগামী ১৯ জানুয়ারী-২৪ তারিখ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩-এর পুরুষ্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের শিক্ষা সপ্তাহ সমাপনী ঘটবে। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে দেশ সেরা শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্যদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণ করবেন। এসময় রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেরর পক্ষ থেকে দেশ সেরা (কারিগরি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরুষ্কার গ্রহণ করবেন অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক ।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সিডিউল জনিত কোন কারণে উপস্থিত হতে না পারলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পুরুষ্কার বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে, অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক ১৯৭৩ সালে এপ্রিল মাসে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মরহুম আলহাজ্ব মাহতাব উদ্দিন মল্লিকের প্রথম সন্তান। শিক্ষা জীবনে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে কৃতিত্বের সাথে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর শিক্ষা জীবন শেষে ঢাকার লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি কলেজ ও মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনা করেন। ব্যক্তি জীবনে অধ্যক্ষ মোঃ ওমর ফারুক দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার সহধর্মীনি রাজশাহী সরকারি কলেজিয়েট স্কুলে ইংরেজি বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।