রবিবার | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘন কুয়াশায় জবুথবু জনজীবন, রবি শস্যের ক্ষতির শঙ্কা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাত-ভোর কুয়াশায় ঢাকা থাকছে রাজশাহী। ভোরে কুয়াশার আস্তরণ এতোটাই বেশি যে তিন-চার ধাপ পর কে আছে তা দেখা যাচ্ছে না। হেডলাইট জ্বালিয়েও কচ্ছপ গাড়িতে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। ঝিরঝির বৃষ্টির মতো রাতে পড়ছে কুয়াশা। ভিজছে রাস্তা-ঘাট। ঘাসের ডগায় জ্বলজ্বল করছে শিশির বিন্দু।

শীতের আগমনে পাখিও গাছের ডালে ঠুকরে ঠুকরে বাসা বানাচ্ছে। দিনভর রোদের দেখা না মেলায় হিমেল হাওয়া যেন হুল ফোটাচ্ছে মানুষের শরীরে। গত এক সপ্তাহ ধরেই রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এতে জুবুথুবু জনজীবন। বিপাকে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা। দূর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবিরা। অন্যদিকে, রবি শস্যেও ক্ষতির শঙ্কা প্রকাশ করছেন চাষী ও কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের সূত্র বলছে, আগামী দু’একদিনের মধ্যে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

রাজশাহী আবহওয়া অফিসের তথ্যমতে, বুধবার (১১ নভেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা সকাল ৬ টায় ৯৭ শতাংশ এবং সন্ধ্যায় ৯৫ শতাংশ। যা সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারও আগে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদিন রাজশাহীতে সূর্যের দেখা না মিলরেও বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার পর সূর্যের দেখা মেলে। তবে সূর্যের উত্তাপ না থাকায় তা খুব একটা উষ্ণতা ছড়াতে পারে নি। চলতি মৌসুমে গত সোমবার দুপুরের পর হয় হালকা বৃষ্টিরও দেখা মেলে। সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশায় ঢেকে যায় প্রকৃতি। রাত ১০টার পর তো দৃষ্টিসীমা ২০ মিটারের কমে নেমে যায়। সড়ক-মহাসড়কে গতি কমিয়ে চলাচল করে যানবাহন।

এদিকে, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এলার্জি, এ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। অপরদিকে, কঁপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজশাহীর আলু চাষীদের।

রাজশাহীর মাঠজুড়ে এখন চলছে রবিশস্যের আবাদ। সরিষা, টমেটো, শিম, লাউ, শালগম, বাঁধাকপি, আলু থেকে শুরু করে একাধিক রবি ফসল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেক ফসল ঘরে তোলার সময়ও হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহ ধরে টানা কুয়াশায় অনেক ফসলেই বেড়েছে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ। এ কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

কৃষি তথ্য সূত্র জানায়, কুয়াশার কারণে ধানের চারা হলদে হয়ে যেতে পারে। সরিষায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। আলুর পাতায় মড়ক লাগার আশঙ্কা আছে। সাধারণত এসময় আম গাছে মুকুল আসে। তাই ভালো ফলন পেতে এসময় বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এসব বিষয়ে সমাধান পেতে নিকটস্থ কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সমাধান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক উম্মে ছালমা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণসহ নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এভাবে বেশিদিন ঘন কুয়াশা থাকলে রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.