নিজস্ব প্রতিবেদক: নওগাঁয় চার মাসের বেশি সময় ধরে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য (ওএমএস) এর চাল ও আটা বিক্রি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনতিবিলম্বে ওএমএস কার্যক্রম চালুর দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ঘেরাও করে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান করতে দেখা যায় তাদের। পরে জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল কবিরের আশ্বাসে সেখান থেকে সরে যান তারা।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে নওগাঁ পৌরসভা এলাকায় ১৮টি কেন্দ্রে ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে স্বল্প মূল্যে চাল ও আটা দিত সরকার। তবে ৫ আগস্টের পর ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে হঠাৎই ১৫টি কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। এতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। তাই অনতিবিলম্বে ওএমএস সবকটি কেন্দ্র চালুর দাবি তাদের।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রিকশাচালক সোহেল রানা বলেন, “সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয় সেটা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য। ওএমএস কর্মসূচি চালু অবস্থায় কম দামে চাল ও আটা কিনে কিছুটা সামাল দিতাম। সেই চাল-আটা টানা ৪ মাস যাবত পাচ্ছি না। তাই দুই বেলা শান্তিতে পেটপুরে খাওয়া হচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে পেটের ক্ষুধায় ফুড অফিসে এসে দাঁড়িয়েছি। কী কারণে এটি বন্ধ রয়েছে সেই কারণ কর্মকর্তাদের কেউই স্পষ্টভাবে বলতে চাইছেন না।”
মানোয়ারা বেগম নামে এক নারী বলেন, “জীবিকার তাগিদে বৃদ্ধ বয়সে এসেও রাস্তার আনাচেকানাচে বসে বিভিন্ন ফলমূল বিক্রি করে আয় করি। সেই রোজগার দিয়ে ৫৪ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। তাই ওএমএস-ই শেষ ভরসা ছিল। গরিবের সেই চাল-আটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। নয়তো আমাদের অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটানো ছাড়া উপায় থাকবে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল কবির বলেন, “বন্ধ থাকা ওএমএস কেন্দ্র চালুর দাবি নিয়ে অফিস চত্বরে আসা ভোক্তাদের কথা শুনেছি। তাদের দাবির বিষয়গুলো জেলা ওএমএস কমিটি বরাবর উত্থাপন করা হবে। শিগগিরি ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিয়ে এই সংকট সমাধান করা হবে।”
জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুর আউয়াল বলেন, “পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর নওগাঁ পৌরসভা এলাকার অধিকাংশ ওএমএস ডিলার সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে যৌথ মতামতের ভিত্তিতে ১৫টি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেইসঙ্গে নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হয়। যেহেতু তারা বিক্ষোভ করেছেন, প্রয়োজনে যৌথ মতামতের ভিত্তিতে আবারো কেন্দ্রগুলো চালু করা হবে।”