সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানালেন না কেউ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার বুদ্ধিজীবী দিবসেও রাজশাহীর বাবলা বন বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকের তালা খোলা হয়নি। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত সেখানে কেউ ফুল নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানাতে যাননি। রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় টি-বাঁধের একপাশে অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধটি।

১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহীর শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর তাদের হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয় শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ের বাবলা বনে। স্বাধীনতা অর্জনের পর ৩০ ডিসেম্বর এই বধ্যভূমিটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

অনেকে মনে করেন, যে ১৭ জন শহীদের মরদেহ এখানে পাওয়া যায়, তাদের জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ, তাঁদের একই রশিতে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়, কিন্তু শরীরে বুলেটের চিহ্ন ছিল না। স্বাধীনতার পরও বধ্যভূমিটি দীর্ঘ দিন অনাদরেই পড়ে ছিল। ১৯৯৫ সালের ২৫ নভেম্বর এই শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক বসানো হয়। এর উদ্বোধন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম।

সেদিন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য এখানকার মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ওই স্মৃতিফলক স্থাপনের পরও কেটে যায় অনেক দিন। ২০২০ সালে বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

কিন্তু এর প্রধান ফটকে সব সময় তালাই লাগানো থাকে। ২৫ নভেম্বর বাবলা বন গণহত্যা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। সেদিনও তালা খোলা হয় না। বুদ্ধিজীবী দিবসেও অনেকে এখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সেদিনও খোলা হয় না প্রধান ফটকের তালা।

শনিবার দুপুরে টি-বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধে তালা ঝুলছে। স্মৃতিসৌধের সামনেই ফুলের দোকান স্বপন আলীর। তিনি জানান, সকাল ১০টায় তিনি দোকানে এসেছেন। কেউ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন এমনটি দেখেননি। সকাল থেকে স্মৃতিসৌধের ফটকের তালাও খোলা হয়নি।

সকাল ৯টায় দোকানে এসেছেন স্মৃতিসৌধের সামনের চিপসের দোকানি হুমায়ন কবির। তিনি জানালেন, সকাল থেকেই তিনি স্মৃতিসৌধের ফটক তালাবদ্ধই দেখেছেন। গত ২৫ নভেম্বর বাবলা বন দিবসেও ফটকের তালা খোলা হয়নি। ফটক বন্ধ পেয়ে কেউ ঘুরে গেছেন কি না তিনি দেখেননি।

আগে এই স্মৃতিসৌধের গেটের তালার চাবি থাকত টি-বাঁধের আরেক দোকানি মো. বাচ্চুর কাছে। তিনি উত্তরভূমিকে বলেন, ‘আমি কয়েকবছর বিশেষ দিনগুলোতে তালা খুলে দিতাম। ঝাড়ু দিতাম। দেখভাল করতাম। এ জন্য আমাকে ৫০০ টাকাও কোনদিন দেয়নি। তাই চাবি এলজিইডি অফিসে জমা দিয়েছি। এখন কেউ তালা খোলে কি না আমি জানি না। আজও খুলতে দেখিনি।’

এই বধ্যভূমিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নাজমুল হক সরকার, সরকারি কর্মকর্তা আবদুল হক সরকার, ব্যবসায়ী আজিজুল হক চৌধুরী, শামসুল ইসলাম ঝাটু, অ্যাডভোকেট সুরেশ, বীরেন সরকার, মকবুল হক চৌধুরী, আলতাফ হোসেন, মির্জা সুলতান, মির্জা আজিজুর রহমান, নওরোজ দৌল্লাহ খান, আমিনুল হক, তৈয়ব আলী, আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ মুক্তার মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। একই রশিদে বাঁধা ছিল তাদের দেহ। পরনের পোশাক ও হাতের আংটি দেখে স্বজনেরা তাদের শনাক্ত করেন।

গতবছরও বুদ্ধিজীবী দিবসে এই বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে তালা লাগানো ছিল। জাতীয় শ্রমিক লীগের জেলা শাখা ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সেদিন তালা ভাঙেন। এর আগের বছর ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বরও তালা লাগানো ছিল। সেদিনও জনমানব উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন।

এবারও তালা লাগিয়ে রাখার ব্যাপারে কথা বলতে দুপুরে এলজিইডির রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহা. নাশির উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। সন্ধ্যায় তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারও ফোন ধরেননি। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.